প্রতীকী ছবি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৪ হাজার ছুঁইছুঁই। সংক্রমণের হার কোথায় গিয়ে থামবে তা ভেবেই উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা৷ আগামী দিনে সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ মে থেকে ৭ মে পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩,৭২২ জন। এই সময়ে মারা গিয়েছেন ১৮১ জন। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৩,৫১১ জন।
সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে অক্সিজেনের চাহিদা প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলায় এই মুহূর্তে অক্সিজেনের সঙ্কট না থাকলেও ভবিষ্যতে অভাব দেখা দিতে পারে। সিলিন্ডারের আকাল অবশ্য এখনই দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে তৎপর হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলায় ৯টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই রোগীরা পরিষেবা পাবেন।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, শ্রী বলরাম সেবামন্দির স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি প্লান্ট বসছে।
এ ছাড়া, বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে এবং বসিরহাট, পানিহাটি, বারাসতে আরও ৬টি প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এগুলি মিনিটে ১০০০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন।
এই সব অক্সিজেন প্লান্ট থেকে সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে রোগীদের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে যাবে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করবে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া। তারা পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে গিয়েছে। জায়গা চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘এখানে দু’টি প্লান্ট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আমরা আরও উন্নত পরিষেবা দিতে পারব। এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার একটি সংস্থা থেকে রিফিল করতে হচ্ছে। এর ফলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। প্লান্ট তৈরি হয়ে গেলে আরও কোনও সমস্যা থাকবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে প্লান্ট চালু হওয়ার কথা।’’
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘শতকরা ৫ শতাংশ করোনা রোগীকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রেখে মনিটারিং দরকার। স্বাভাবিক ভাবেই ওই রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘এ বছর করোনা আক্রান্ত রোগীদের আচমকাই অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যাচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, এক ঘণ্টার মধ্যে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৬০ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখাটা জরুরি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় অশোকনগর, হাবড়া, বনগাঁ-সহ কয়েকটি জায়গায় নতুন করে সেফ হোম তৈরি হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে তা চালু হওয়ার কথা। ওই সব সেফ হোমগুলিতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হবে। গত বছর বেশির ভাগ সেফ হোমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারের জোগান ছিল না। ফলে অক্সিজেন অভাবে প্রায়ই রোগীদের করোনা হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছিল। এ বার জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য, সেফ হোমগুলিতেই উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy