Advertisement
০৭ মে ২০২৪
coronavirus

প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের পথে

কালোবাজারির জন্য বেশি করে মদ কিনে রাখার অভিযোগ ওঠে নানা জায়গায়।

বাস ধরতে কসরত করছেন যাত্রীরা। ভিড় বাড়ছে ছাদেও। শনিবার ডায়মন্ড হারবারে ছবিটি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।

বাস ধরতে কসরত করছেন যাত্রীরা। ভিড় বাড়ছে ছাদেও। শনিবার ডায়মন্ড হারবারে ছবিটি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

ক্রমশ বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ রুখতে দিন কয়েক আগেই দোকান-বাজার, ট্রেন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এনেছিল রাজ্য সরকার। কড়াকড়ি আরও বাড়িয়ে রবিবার থেকে নানা বিধিনিষেধের কথা ঘোষণা করা হল। ট্রেনে পাশাপাশি এবার বাস ও অন্য যানবাহনও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বাজার-দোকান খোলা রাখার সময়সীমা কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি, বেসরকারি অফিসও পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে এই ঘোষণা হতেই, কাজের সূত্রে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে থাকতে হয়, এমন অনেকেই বাড়ির পথ ধরেন। তবে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। সন্দেশখালি থানার ধুচনিখালি গ্রামের বাসিন্দা অমল মিস্ত্রি স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে কলকাতার কেষ্টপুরে থাকতেন। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। লকডাউনে শহরে থাকলে খাওয়া জুটবে না, এই আশঙ্কায় দুই বাচ্চা ও স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বিকেল ৫টা নাগাদ বেরিয়ে পরেন বাড়ির দিকে। অমল জানান, এমনিতে কেষ্টপুর থেকে সরাসরি সন্দেশখালির ধামাখালি যাওয়ার বাস পেয়ে যান। কিন্তু এ দিন বাস স্ট্যান্ডে এসেও প্রবল ভিড়ে বাচ্চা নিয়ে বাসে উঠতে পারেননি। তাই অটো করে নিউ টাউন এসে, একাধিক গাড়ি পাল্টে ধামাখালির দিকে রওনা দেন। এ দিন সন্ধ্যায় ফোনে অমল বলেন, “ধামাখালি গিয়ে ওখান থেকে নদী পেরিয়ে আবার ভ্যান ধরে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তারপর আমাদের গ্রাম। জানি না কত রাত হবে পৌঁছতে। রাতে আদৌ ভ্যান পাব কিনা সেটাও চিন্তার। দুই বাচ্চাকে নিয়ে অতটা পথ হাঁটাও সম্ভব না।”

ঠাকুরপুকুরে একটি কারখানায় কাজ করেন সাগরের বাসিন্দা দেবাশিস জানা। সেখানেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সরকারি বিধিনিষেধের কথা শুনে এ দিন তড়িঘড়ি পরিবার নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। বিকেলে ডায়মন্ড হারবার বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দেবাশিস বলেন, “ঠাকুরপুকুর থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত পৌঁছতেই দশটা গাড়ি বদলাতে হয়েছে। কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে এখনও কটা গাড়ি পাল্টাতে হবে জানি না। কচুবেড়িয়া ঘাটে যাওয়ার শেষ ভেসেলটা না পেলে খুবই সমস্যা হবে।” তিনি আরও বলেন, “ছোট কারখানায় কাজ করে কোনও ভাবে সংসারটা চলছিল। জানি না এ বার কী হবে।”

গত বছর লকডাউনে সমস্যায় পড়েছিলেন দিন আনা দিন খাওয়া বহু মানুষ। এ বারও আশঙ্কিত তাঁরা। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা নিলু হালদার কলকাতার একটি কাপড়ের কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। তাঁর কথায়, “মালিক বলে দিয়েছে কাল থেকে আর কাজে আসতে হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফোনে খবর দেবেন। দুই সন্তান, বয়স্ক বাবা, মাকে নিয়ে ছ’জনের সংসার কী ভাবে চলবে জানি না। এক বছর আগের সেই দুঃসহ দিন ফিরে এল।”

সমস্যার মুখে পড়তে চলেছেন ছোট ব্যবসায়ীরা, খুচরো দোকানদারও। বসিরহাটের মৎস ব্যবসায়ী জুলফিকার আলি বলেন, “গাড়ি চলবে না। অফিস বন্ধ থাকবে। ফলে গ্রামের ব্যবসায়ীরা মাছ বাজারে আনতে পারবেন না। আবার বাইরে থেকে মাছের গাড়িও আসতে পারবে না। ফলে খুবই বিপদে পড়ব আমরা।” গামছা বিক্রেতা পরিমল মণ্ডল বলেন, “গত বছর লকডাউনের শেষের দিকে আমাদের এক রকম অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছিল। আবার সেই দৃশ্য দেখতে হবে।” বসিরহাটের এক হোটেল মালিক জয়দেব দাস বলেন, “গত বার লকডাউনে হোটেল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এর ফলে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। জানি না এ বার কী হবে।”

গতবার লকডাউনে বাজারে বেআইনি মজুতদারি ও মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলিতেও ভিড় বেড়েছে। ভাঙড়ের একটি বাজারে আসা এক ক্রেতা গোলাম রব্বানি বলেন, “এ তো লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, আলু বাড়িতে কিছুটা মজুত করে রাখলাম। যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়।”

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি এ দিন ভিড় বাড়ে মদের দোকানে। নির্দেশ অনুযায়ী, রবিবার থেকে মদের দোকান বন্ধ থাকবে। তার আগে অনেকেই মদ কিনতে দোকানে দোকানে লাইন দেন। বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায় মদের দোকানে ভিড়ের জেরে যানজট তৈরি হয়। বনগাঁ শহরে এ দিন সন্ধ্যায় আচমকা ভ্যানের যাতায়াত কমে যায়। মানুষ ভ্যানের খোঁজ করতে এসে জানতে পারেন, চালকেরা মদের দোকানে লাইন দিতে গিয়েছেন। এরই মধ্যে কালোবাজারির জন্য বেশি করে মদ কিনে রাখার অভিযোগ ওঠে নানা জায়গায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE