এক দিনে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হল উত্তর ২৪ পরগনায়। কলকাতাকে পিছনে ফেলে করোনায় দৈনিক মৃত্যুতে ফের রাজ্যে শীর্ষে উঠে এল এই জেলা।
মে মাসের শুরু থেকে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা একে অপরকে টক্কর দিচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার জেলায় মারা গিয়েছেন ৪৮ জন। সাম্প্রতিক সময়ের হিসেবে এই সংখ্যা সর্বাধিক। বুধবার কলকাতায় মারা গিয়েছেন ৩১ জন। ১ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭২,৯৯৬ জন। এই সময়ে মারা গিয়েছেন ৬২৪ জন। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও করোনার উপসর্গ নিয়ে বহু মানুষ প্রতিদিন বাড়িতে মারা যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কেন ঊর্ধ্বমুখী?
বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “হাসপাতালে এমন অনেক রোগী আসছেন, যাঁদের অক্সিজেন মাত্রা ৩০-৪০ এর মধ্যে। ফলে রোগীকে বাঁচানো আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই করোনা পজ়িটিভ হওয়ার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পরামর্শ করছেন না। নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে রোগী হাসপাতালে এলে আমাদের লড়াইটা সাধ্যের বাইরে চলে যায়।’’ এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, করোনায় মৃত্যু হওয়া বড় অংশের মানুষের বয়স ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এবং তাঁদের কোমর্বিডিটি (ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো অসুখ) ছিল।’’
স্বাস্থ্য দফতর ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ থাকলেও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ওষুধের দোকান থেকে কিনে ওষুধ খাচ্ছেন। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে হাসপাতালে আসছেন। এতেই সমস্যা বাড়ছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এই বছর করোনা আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে নেমে ৬০ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে চিকিৎসাধীন এ রকম রোগীকে ওই মুহূর্তে অক্সিজেন দিতে বা হাসপাতালে ভর্তি করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এমন রোগী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও পরিবারের লোকেরা তাঁকে বাড়িতে রেখে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তবে এই ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলেই চিকিৎসকদের মত। কারণ, রোগীকে কত মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। অক্সিজেনের মাত্রা বেশি বা কম হলে তা রোগীর পক্ষে ক্ষতিকারক।
করোনায় আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের পাল্টা অভিযোগও আছে। তাঁরা জানান, আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তিন-চার দিন পরে আসতে বলা হচ্ছে। আবার রিপোর্ট আসতেও তিন-চার দিন সময় লাগছে। এই সময়ের মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রিপোর্ট থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করে ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আরও অভিযোগ, হাসপাতালে সব সময়ে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা মিলছে না। পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রেখে শুধু অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।