Advertisement
E-Paper

উপসর্গ চেপে রাখার প্রবণতায় বাড়ছে বিপদ

বাড়িতে মারা যাওয়ার পরে জানা যাচ্ছে, তাঁদের করোনার উপসর্গ ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৬:১৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কয়েক দিন ধরে বনগাঁ ব্লকের বাসিন্দা পঁচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধ বাড়িতে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছিলেন। করোনা পরীক্ষা করাননি। স্বাস্থ্যকর্মীরা বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন। তাঁরা যোগাযোগ করেন বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায়ের সঙ্গে। বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দ্রুত তিনি ওই বৃদ্ধকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় বৃদ্ধের পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। তাঁকে ভর্তি করা হয় মহকুমা হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে। পর দিন সেখানেই মারা যান তিনি। মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধের প্রথমেই করোনা পরীক্ষা করানো হলে এবং চিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে হয় তো বাঁচানো যেত। জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে কিছু মানুষ বাড়িতে নিজেরাই ওষুধ খাচ্ছেন। করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এর ফলে বিপদের ঝুঁকি থাকছে।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এমন ঘটনা আরও শোনা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সচেতনতার অভাবে কেউ শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও মারা যাচ্ছেন। কেউ আবার মারা যাচ্ছেন বাড়িতে। বাড়িতে মারা যাওয়ার পরে জানা যাচ্ছে, তাঁদের করোনার উপসর্গ ছিল।

দিন কয়েক আগে বাগদা ব্লকে এমনই দু’জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাড়িতেই মারা গিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের জ্বর, সর্দির মতো করোনার উপসর্গ ছিল। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাননি। চিকিৎসককেও দেখাননি। বাড়িতে নিজেদের মতো ওষুধ খাচ্ছিলেন।

বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষদের করোনা পরীক্ষা করানোর অনুরোধ করছেন। এরপরেও কিছু মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।’’

গাইঘাটা ব্লকেও দিন কয়েক আগে এক বৃদ্ধ জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগে বাড়িতেই মারা গিয়েছেন। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগলেও কিছু মানুষ পরীক্ষা করাতে চাইছেন না।’’

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে বাড়িতে ওষুধ খাওয়ার পরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা। অনেক ক্ষেত্রে অবনতিই ঘটছে। শেষ মুহূর্তে অনেকে হাসপাতালে আসছেন। তখন তাঁদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিন্তু দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে অনেক সময়ে চিকিৎসকদেরও বিশেষ কিছু আর করার থাকে না।

সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘অসচেতনার ফলে বাড়িতে অনেকেই ওষুধ খাচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা হঠাৎ খারাপ হলে হাসপাতালে আসছেন। এর ফলে কাউকে কাউকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’’

চিকিৎসকদের পরামর্শ, উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ চালু করতে হবে। নিজেদের বিদ্যা ফলানোর কোনও জায়গাই নেই এই পরিস্থিতিতে। উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেকেই ভাবছেন, সর্দি-গর্মি থেকে উপসর্গ আসছে। করোনার অনেক লক্ষণই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি-গর্মির সঙ্গে মিলেও যায়। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় যখন করোনা কার্যত পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সামান্য উপসর্গ হলেও তা ফেলে রাখা যাবে না। চিকিৎসককে দেখাতে হবে।

অনেকে আবার উপসর্গহীন। তাঁরা করোনা পরীক্ষা করিয়ে দিব্যি মাঠেঘাটে ঘুরছেন। লোকজনের সংস্পর্শে আসছেন। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে তা কেউ কেউ চেপে যাচ্ছেন বলেও খবর আছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এক রোগী ওষুধ নিতে চলে গিয়েছিলেন। এলাকার লোকজনকে বলে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে তাঁকে বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বনগাঁ শহরে এক ব্যক্তির বাড়িতে দু’জন করোনা পজ়িটিভ হওয়ার পরেও তিনি বাইরে ঘোরাঘুরি করেছেন।

ওষুধের দোকানগুলিকে জ্বর, সর্দি-কাশির ওষুধ নেওয়ার ভিড় লেগেই আছে। দোকানিরা তাঁদের করোনা পরীক্ষা করাতে বললেও অনেকে বলছেন, তেমন কিছু হয়নি। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘এক ওষুধের দোকানে দেখি, করোনার উপসর্গের কথা বলে লোকজন ওষুধ নিতে এসেছেন। তাঁরা কেউ পরীক্ষা করাননি। তাঁদের পরীক্ষা করতে বলি।’’ পুরসভার পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। এক ওষুধের দোকানি বেশিরভাগ সময়ে দোকান বন্ধ রাখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দোকান খোলা রাখলে মানুষ এসে জোর করে ওষুধ দিতে চাপ দিচ্ছেন। না দিয়েও পারা যাচ্ছে না। তাই দোকান সব সময়ে খুলছি না।’’

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy