Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ONGC

শিল্প ও কৃষিবন্ধু ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় মরিয়া সিপিএম

তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পের কাজে যাতে কোনও বাধা না আসে, সে জন্য কিছু দিন ধরেই নানা কর্মসূচি নিয়েছে বামেরা। এর আগে কৃষকদের প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাতে এলাকায় গিয়ে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন সিপি‌এম নেতারা। 

ক্ষতিপূরণের দাবিতে মিছিল। অশোকনগরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

ক্ষতিপূরণের দাবিতে মিছিল। অশোকনগরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০৩
Share: Save:

অশোকনগরে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রকল্পের হাল যাতে সিঙ্গুরের টাটাদের প্রকল্পের মতো না হয়— তা নিয়ে পথে নামল সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন। পাশাপাশি চাষিদের ক্ষতিপূরণ সহ কয়েক দফা দাবি জানিয়েও রবিবার কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ই-মেল করেছে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই।

চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে, ওএনজিসি প্রকল্পের হাত ধরে নানা অনুসারী শিল্প গড়ে তুলতে হবে। ‘আত্মনির্ভরতা’র নামে অশোকনগরের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের ভান্ডারের বেসরকারিকরণ করা যাবে না। প্রকল্প এলাকায় চাষাবাদ করা মানুষজনকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের মাধ্যমে যোগ্যতা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে। প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই পরিবেদূষণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পের কাজে যাতে কোনও বাধা না আসে, সে জন্য কিছু দিন ধরেই নানা কর্মসূচি নিয়েছে বামেরা। এর আগে কৃষকদের প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাতে এলাকায় গিয়ে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন সিপি‌এম নেতারা।

রবিবার সকালে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআইয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় গোলবাজার এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রা শেষ হয় বাইগাছি মৌজায়, প্রকল্প এলাকায়। পদযাত্রার শুরু ও শেষে দু’টি সভাও হয়। বাম ছাত্র-যুবদের পাশাপাশি পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন, প্রকল্প এলাকার চাষি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। এ দিনের পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের অশোকনগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সত্যসেবী কর। এ দিনের পদযাত্রায় ‘অশোকনগরকে দ্বিতীয় সিঙ্গুর হতে দেব না’— এই ধরনের ব্যানার-পোস্টারও ছিল তাঁদের সঙ্গে।

বাম জমানার শেষ ভাগে এসে সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের একলাখি গাড়ি তৈরির প্রকল্প ভেস্তে গিয়েছিল জমি আন্দোলনের জেরে। সে সময়ে আন্দোলনের রাশ ছিল বিরোধী দল তৃণমূলের হাতে। এখন রাজ্যে ক্ষমতায় নেই বামেরা। কিন্তু রাজ্যে উন্নয়নের স্বার্থে ‘শিল্প-বান্ধব’ অবস্থান থেকে তাঁরা সরেননি বলেই বার্তা দিতে চাইছেন সিপিএম নেতারা। মিনাক্ষী বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে রাজ্যে কর্মসংস্থানের জায়গা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। দেশ জুড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বন্ধ করে না হয় বেচে দিচ্ছে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যূনতম কোনও কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অশোকনগরের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।’’

অশোকনগরের বাইগাছি মৌজায় তেল ও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে ওএনজিসি। বাণিজ্যিক ভাবে তা উত্তোলনের তোড়জোড় চলছে। গত ছ’বছর ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪ একর জমিতে কাজ চলার পরে এ বার প্রয়োজন আরও ১২ একর জমি। বেশিরভাগই সরকারি খাসজমি। কিছু চাষবাস হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, বাইগাছি মৌজা ছাড়াও ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ সংলগ্ন হিজলিয়া মৌজাতেও জমির মাপজোক ও চিহ্নিতকরণের কাজ করছেন।

দিন কয়েক আগে চাষিরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবি তুলে এলাকায় মিছিল করেন। পথ অবরোধ, বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে সেখানে দেখা গিয়েছিল। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওই নেতা ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছিলেন। দলের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠানো হয়নি।

এরপরেই সিপিএম নেতৃত্ব চাষিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। বোঝানো হয়, পথ অবরোধ বা মিছিল করে নয়, ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের দাবি আদায় করতে হবে। প্রকল্পের কাজে কোনও ভাবেই বাধা দেওয়া চলবে না। এ দিনও চাষিদের বোঝানো হয়, এই প্রকল্প চালু হলে এলাকার উন্নয়ন হবে, কর্মসংস্থান হবে। তবে চাষিদের ক্ষতিপূরণ ও যোগ্যতা অনুযায়ী পরিবার-পিছু একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে— এই দাবিও তোলা হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, তাঁরাও চান এলাকায় প্রকল্প হোক। কিন্তু আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করছেন না। এর ফলে তাঁরা বিভ্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ONGC CPM Ashokenagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE