E-Paper

আতঙ্ক, লেপ-কাঁথা নিয়ে এ দেশে পা

ময়মনসিংহ থেকে পেট্রাপোল হয়ে আসা সুমিতা বাগের (নাম পরিবর্তিত) কথাই ধরা যাক। সকালে স্বামীকে নিয়ে এসেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩২
লেপ-কাঁথা নিয়ে এ দেশে আসছেন বাংলাদেশিরা।

লেপ-কাঁথা নিয়ে এ দেশে আসছেন বাংলাদেশিরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামানিক।

ছবিটা ব্যতিক্রমী!

সাধারণত মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে বেশির ভাগ বাংলাদেশি উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বা ঘোজাডাঙা সীমান্ত হয়ে এ দেশে আসেন চিকিৎসা করাতে। তাঁদের সঙ্গে জিনিসপত্র খুব বেশি থাকে না। কিন্তু রবিবার পেট্রাপোলে দেখা গেল, অনেক বাংলাদেশিরই সঙ্গে লটবহর বেশি। তার মধ্যে লেপ, কাঁথা, বালিশ— কী নেই! আর চোখ-মুখে একরাশ আতঙ্ক।

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জেরে সে দেশের বহু মানুষই আতঙ্কিত। এমনকি, যে সব জায়গায় কোনও গোলমাল হয়নি, আতঙ্ক সেখানেও গ্রাস করেছে। মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে যাঁরা এ দেশে এলেন, তাঁদের অনেকেই চাইছেন বেশি দিন থেকে যেতে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর পর যে অশান্তি ছড়িয়েছে, তা প্রশমিত হলে তাঁরা ফিরতে চান।

ময়মনসিংহ থেকে পেট্রাপোল হয়ে আসা সুমিতা বাগের (নাম পরিবর্তিত) কথাই ধরা যাক। সকালে স্বামীকে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে লেপ-কাঁথা। বললেন, ‘‘দেশে থাকতে ভয় লাগছে। স্বামী তিন বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য এসেছি। কিছুদিন এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব। তাই লেপ-কাঁথা নিয়ে এসেছি।’’ সাতক্ষীরা থেকে আসা আর এক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের এলাকায় এখনও বড় কিছু হয়নি। কিন্তু দেশের নানা জায়গা থেকে ভয়াবহ খবর আসছে। তাই এখানে কিছুদিন শান্তিতে থাকতে চাই।” তিনি উত্তর ২৪ পরগনায় আত্মীয়ের বাড়িতে উঠবেন বলে জানান। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘‘ওখানে আমরা কোনও মতে বেঁচে আছি।’’

দুই সীমান্ত দিয়ে শুধু বাংলাদেশিরাই নয়, কাজ, বেড়ানো বা পড়াশোনায় ছেদ টেনে ফিরে এসেছেন বেশ কিছু ভারতীয়ও। আতঙ্কিত তাঁরাও। তাঁদের মধ্যে ঢাকায় কর্মসূত্রে যাওয়া এই জেলারই সত্যপ্রকাশ বলেন, ‘‘সবাই অশান্তি করছে, এমন নয়। কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী পরিস্থিতি খারাপ করছে। আরও কয়েক দিন থাকার কথা ছিল। নিরাপত্তার কারণে ফিরে এলাম।’’ বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া এক ভারতীয় ছাত্র ফিরে বলেন, ‘‘ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ভারতীয়দের নিশানা করা হচ্ছে। আর থাকার ঝুঁকি নিলাম না।”

ঘোজাডাঙা দিয়ে ফেরা ভারতীয়েরা জানান, ও দেশের খুলনা, ঢাকা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, মহিলাদের উপরে অত্যাচার, মারামারি, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে। হুগলির আরামবাগের চিত্তরঞ্জন মণ্ডল ২০ দিনের ভিসা নিয়ে খুলনাতে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরে তিনি বলেন, ‘‘ওখানে বেশ কাটছিল। হঠাৎ শুরু হল হাঙ্গামা। যখন-তখন হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট চলছে। প্রাণ হাতে নিয়ে কাটাচ্ছিলাম। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফিরে এলাম।’’

বাংলাদেশের এই অশান্তির দ্রুত অবসান চাইছেন সকলে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Petrapole

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy