Advertisement
০৫ মে ২০২৪
School Cricket

বিকল্প পেশার খোঁজ দিতে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ মেয়েদের স্কুলে

প্রধান শিক্ষিকা চিত্রিতা মজুমদার জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের পড়ুয়ারা বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এদের অনেকেই খেলাধুলোয় ভাল এবং ক্রিকেটেও উৎসাহ আছে।

ঠাকুরপুকুরের স্কুলের মাঠে চলছে ছাত্রীদের  ক্রিকেট অনুশীলন।

ঠাকুরপুকুরের স্কুলের মাঠে চলছে ছাত্রীদের ক্রিকেট অনুশীলন। নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
ঠাকুরপুকুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৮
Share: Save:

টেলিভিশনের পর্দায় ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে ওদের মনে হত, চেষ্টা করলে ওরাও তো পারে। ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর খবর কাগজে পড়ে, টিভিতে দেখে ওরা স্বপ্ন দেখত তেমনটা হওয়ার। কিন্তু, সুযোগ ছিল না। এ বার সেই সুযোগই দিচ্ছে ওদের স্কুল, ঠাকুরপুকুরের কলাগাছিয়া কৈলাস কামিনী উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক)। ছাত্রীদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছে স্কুলটি। আগামী ২০ জানুয়ারি স্কুলেরই বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে থেকে একাধিক দল গঠন করে আয়োজিত হতে চলেছে আন্তঃশ্রেণি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ কেন মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণে জোর দিলেন? প্রধান শিক্ষিকা চিত্রিতা মজুমদার জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের পড়ুয়ারা বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এদের অনেকেই খেলাধুলোয় ভাল এবং ক্রিকেটেও উৎসাহ আছে। অথচ, ক্রিকেট খেলা ব্যয়বহুল হওয়ায় তার প্রশিক্ষণ তারা পায় না। পড়ুয়াদের অনেকেরই ব্যাট হাতে ধরে দেখার সুযোগও মেলেনি। চিত্রিতা বলেন, ‘‘কোনও ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে শেখার মতো আর্থিক সঙ্গতিওদের নেই।’’

চিত্রিতার মতে, অনেক মেয়ে আছে, যারা পড়াশোনায় তত মনোযোগী নয়। অথচ, খেলাধুলোয় ভাল। ভাল খেলে তো ভবিষ্যৎ গড়া যায়। মহিলা ক্রিকেটারদেরও এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির সুযোগ রয়েছে। তাই পড়াশোনার বিকল্প পেশার হদিস দিতেই ক্রিকেটের এই প্রশিক্ষণ শুরু করেছে স্কুল।

পেশাদারি মানসিকতা নিয়ে ক্রিকেট খেললে তো প্রশিক্ষণও দরকার। তাই প্রথমে শিক্ষিকারা নিজেদের খরচে এক জন প্রশিক্ষক রেখেছিলেন। তবে তাঁকে বেশি দিন রাখা সম্ভব হয়নি। চিত্রিতা বলেন, ‘‘ওই প্রশিক্ষক চলে গেলে মেয়েরা বলতে শুরু করল, ‘ম্যাডাম, আমরা কি আর ক্রিকেট খেলব না!’ খোঁজখবর নিয়ে আর এক জন প্রশিক্ষককে পেলাম। মোহনবাগান ক্রিকেট দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনসিজ সিংহ। তিনি বিনামূল্যে আমাদের মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।’’ মনসিজ বলেন, ‘‘এই মেয়েদের অনেকে এতটাই গরিব যে। ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পায়নি। ওদের মধ্যে কয়েক জন যদি নিয়মিত প্রশিক্ষণ পায়, তা হলে সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটবে।’’

তবে এখনও টেনিস বলেই চলছে ওদের প্রশিক্ষণ। নবম শ্রেণির পাপিয়া মণ্ডল, একাদশ শ্রেণির দৃষ্টি হালদার, সাবিনা খাতুনেরা কেউ ভাল বল করে, কেউ বা ব্যাটে নজরকাড়ে। আপাতত তাদের লক্ষ্য, ২০ জানুয়ারির প্রতিযোগিতায় ভাল খেলা। এর পরের লক্ষ্য, প্যাড-গ্লাভস পরে বাইশ গজে ব্যাট হাতে নেমে ডিউস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা। হয়তো মনে মনে ভাবছে, কখনও কি নাম ছড়িয়ে পড়বে ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে আরওবহু দূরে!

স্বপ্ন দেখার শুরুটা হোক এ ভাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Cricket Girl students Thakurpukur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE