E-Paper

রক্তের সঙ্কট চলছেই, সমস্যায় রোগী

বেশ কিছু দিন ধরেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গরমের প্রকোপ বাড়তেই রক্তের জন্য হাহাকার বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৯:১৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বছর বাইশের মৌসুমি হালদার দীর্ঘ দিন ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তেরো মাসের এক কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে রক্তের জন্য কষ্ট পাচ্ছিলেন। তিন দিন আগে রক্ত দেওয়ার কথা থাকলেও মেলেনি এ পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল, ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন মৌসুমির স্বামী রাজু। রক্ত মেলেনি।

এ দিকে, রক্ত না পেয়ে ক্রমাগত শরীর খারাপ হতে থাকে মৌসুমির। মঙ্গলবার রাত থেকে বমি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হতাশ হয়ে পড়েন দম্পতি। বিষয়টি কানে যায় ‘রক্তযোদ্ধা’ বিনয় ভকত, রাম দেবনাথদের। রক্তের জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন তাঁরা। কিন্তু সে ভাবে সাড়া মেলেনি।

অবশেষে বুধবার সকালে বিনয় তাঁর পরিচিত এক সাংবাদিককে বিষয়টি জানান। তিনি রক্ত দিতে রাজি হয়ে যান। নিজের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে যেতেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে মৌসুমির জন্য রক্ত দেন ওই ব্যক্তি।

শুধু মৌসুমি নয়, এ দিন সকাল থেকে অন্তত দশ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে। কেউ কেউ ডোনার খুঁজে পেয়েছেন, কেউ বা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছেন।

গত বেশ কিছু দিন ধরেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গরমের প্রকোপ বাড়তেই রক্তের জন্য হাহাকার বেড়েছে। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে রক্তের জোগান স্বাভাবিক রাখতে মহকুমাশাসকের উদ্যোগে এলাকার সমস্ত পঞ্চায়েত সহ সরকারি দফতরে বছরে একটি করে রক্তদান শিবিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে রক্তের জোগান ঠিকই ছিল। মাঝে মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরও অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে প্রচণ্ড গরম এবং নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় সেই সব শিবিরে ব্যাঘাত ঘটেছে। এ কারণেই রক্তের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে।

রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কেও। হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধীনে রয়েছে কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার— দুই মহকুমার ন’টি ব্লক। প্রায় ৩৫-৪০ লক্ষ জনসংখ্যা। তাঁদের রক্তের প্রয়োজনে ছুটতে হয় ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। ওই হাসপাতালের নথিভুক্ত রয়েছেন প্রায় দু’হাজার থ্যালাসিমিয়া রোগী। তাঁদের প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয়। এ ছাড়াও, জরুরি প্রয়োজনে প্রতি দিন বেশ কয়েক ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু বর্তমানে ভোটের আবহে এবং গরমের জেরে রক্তদান শিবির সে ভাবে হচ্ছে না। তার প্রভাব পড়ছে ব্লাড ব্যাঙ্কে। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ সুরভী মান্ডি বলেন, “রক্তের যথেষ্ট সঙ্কট রয়েছে। ক’দিন আগে দু’টি শিবির হওয়ায় ৮০-৯০ ইউনিট রক্ত মজুত থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। হঠাৎ করে মাঝে মধ্যে রক্তের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।”

মাস দু’য়েক কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় রক্তদান শিবিরও কার্যত বন্ধ। ফলে রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়েছে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারে। ভুগতে হচ্ছে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের। পরিস্থিতি সামলাতে সম্প্রতি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরাই জরুরি ভিত্তিতে শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাছে না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Baruipur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy