প্রতীকী ছবি
সাপে ছোবল দিলে চিকিৎসক নয়, ওঝা-গুনিনই পারেন রোগীকে সুস্থ করতে— এই কুসংস্কারের জেরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন বছর কুড়ির তরুণ সঞ্জয় মণ্ডল। আপাতত চিকিৎসা চলছে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে।
বারুইপুর থানার সুভাষগ্রাম পেটুয়াপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় রবিবার রাতে কাজ সেরে মেঠোপথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময়ে ডান পায়ে সাপে ছোবল মারে। বাড়ি ফিরে সে কথা জানান সঞ্জয়। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যান।
দীর্ঘক্ষণ ওঝা তার কেরামতি দেখায়। কিন্তু শরীর ক্রমশ খারাপ হতে থাকে সঞ্জয়ের। শেষমেশ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেয় ওঝা।
রবিবার রাতে সঞ্জয়কে নিয়ে যাওয়া হয় সুভাষগ্রাম প্রাথমিক হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে সঞ্জয়ের অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঠানো হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসার পরে আবার পরিবারের লোকেরা রোগীকে বন্ডে সই করে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন।
সোমবার রাতে সঞ্জয়ের অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে। দু’চোখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। শরীরের একাধিক অঙ্গ অবশ হতে থাকে।
এমন অবস্থায় পরিবারের লোকেরা মঙ্গলবার সকালে ক্যানিং এলাকার আরও এক ওঝার বাড়িতে ঝাড়ফুঁকের জন্য নিয়ে যান সঞ্জয়কে। রোগীর অবস্থা দেখে ওই ওঝাই তাঁকে দ্রুত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা না করিয়ে রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে থাকা কয়েকজনের নজরে বিষয়টি আসতেই তাঁরা কার্যত জোর করে হাসপাতালের ভিতরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান যুবককে।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাপস রায় দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, পর্যাপ্ত চিকিৎসা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সঞ্জয়কে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাপস বলেন, “ সাপে ছোবল দিলে ওঝা-গুনিনের গিয়ে সময় নষ্ট না করে সরকারি হাসপাতালে আসার জন্য বার বার প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ এখনও সচেতন হননি। তা আরও একবার প্রমাণিত হল। সময় মতো এই রোগী এভিএস পেলে সুস্থ হয়ে যেতেন। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক।’’
সঞ্জয়ের বাবা বিশ্বনাথ বলেন, “সাপে ছোবল দিলে ওঝাই তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে পারে বলে জানতাম। সে কারণেই হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁকের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম।’’ সঞ্জয়ের জামাইবাবু বাপ্পা মিস্ত্রি বলেন, “আমরা ওঝা-গুনিনে বিশ্বাস করি। তাই সেখানেই গিয়েছিলাম।’’
এ বিষয়ে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজ্ঞানের উন্নতির যুগে মানুষ আজও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। আমরা বার বার বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালাচ্ছি, সাপে কামড়ানো রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় হাসপাতালে। তবু তার উপরে ভরসা না দেখে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—এটা ভাবাই যায় না।’’ তাঁর মতে সচেতনতা গড়ে তুলতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বোঝাতে হবে, সাপে কামড়ানো রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় হাসপাতালেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy