Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Sitrang

দুর্যোগে বন্ধ ফেরি, বিপর্যস্ত জনজীবন

সোমবার থেকে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, ন্যাজাট  থানা এলাকায়। বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বহু মানুষ।

পাকড়াও: প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করায় ট্রলারের মাঝি-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কচুবেড়িয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র

পাকড়াও: প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করায় ট্রলারের মাঝি-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কচুবেড়িয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৯
Share: Save:

একেকবার একেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে সুন্দরবন। আর নিরাপত্তার প্রাথমিক কাজ হিসাবে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় প্রশাসনের নির্দেশে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই নদীপথে ভুটভুটি, লঞ্চ, নৌকোয় পারাপার বন্ধ থাকে কয়েক দিন। কিন্তু এ ক’দিনের জন্য মূল ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। কারও কাজকর্ম থমকে যায়, কেউ হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন না। কারণ দূরপাল্লার ট্রেন-উড়ান ধরার থাকলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আরও হাজারটা কাজ বিঘ্নিত হয় মানুষের। সুন্দরবনের বহু দ্বীপের মানুষের বক্তব্য, আরও বেশি সেতু হওয়া জরুরি। কিন্তু চাইলেই তা হচ্ছে আর কোথায়!

সিত্রাংয়ের ভ্রূকূটিতে আপাতত কাঁপছেন সুন্দরবনের মানুষ। সোমবার সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেরি চলাচল। গোসাবার বিডিও বিশ্বনাথ দাস বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে জলস্ফীতি হয়েছে। মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্লকের সমস্ত ফেরি যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাতে কোনও বিপদ না ঘটে, সে কারণেই এই পদক্ষেপ। তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পারাপার চলছে।”

গোসাবার বাসিন্দা সুদীপ্ত মণ্ডল, অরুণ সর্দারেরা জানালেন, ফেরি বন্ধ থাকায় কাজে যেতে পারেননি। বার বারই এই সমস্যায় ভুগতে হয়। গোসাবা, গদখালি বা অন্যান্য এলাকায় নদীতে কংক্রিটের সেতু তৈরি হলে এই সমস্যায় পড়তে হত না।

সোমবার থেকে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, ন্যাজাট থানা এলাকায়। বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বহু মানুষ।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি-নেবুখালির মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর দু’দিকে ফেরিঘাটে আটকে পড়েন ৫০-৬০ জন মানুষ। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী নৌকো চলাচল বন্ধ। জরুরি বিষয়ের ক্ষেত্রে যদিও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফেরিঘাটে যাঁরা আটকে আছেন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা, যোগেশগঞ্জ, সাহেবখালি, গোবিন্দকাটি এবং দুলদুলি— এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ যাতায়াত করেন নেবুখালি-দুলদুলি খেয়াঘাট দিয়ে। কালীপুজোর দিন অনেকেই বাইরে থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু খেয়াঘাটে আটকে পড়েন। যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এরপরে দুলদুলি পঞ্চায়েতের প্রধান পরিস্থিতি সামাল দেন।

সাহেবখালির বাসিন্দা, রতন মণ্ডল, সুজন মণ্ডলেরা জানান, কলকাতা থেকে ফিরছিলেন বাড়িতে কালীপুজো উপলক্ষে। সোমবার সকালে নেবুখালিতে আটকে পড়েন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায়।

রতন বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি, এই নদীতে সেতু তৈরি করা হোক। তা না হলে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই ফেরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া, সেতু না থাকায় নৌকোর উপরে নির্ভরতা খুব বেশি। ইচ্ছেমতো যাতায়াত করা যায় না।’’ সাগরের বাসিন্দা সুকদেব পাত্র সোমবার সকালে মেয়েকে সঙ্গে কচুবেড়িয়া ভেসেল ঘাটে এসে হাজির। মেয়েকে নার্সিং পড়তে বেঙ্গালুরু যাবে। মঙ্গলবার বিকেলে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরি না চলায় বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। অনেকেরই বক্তব্য, পাকা সেতু তৈরি ছাড়া এ সমস্যায় স্থায়ী সমাধান হওয়ার নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Sitrang 24 Parganas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE