Advertisement
E-Paper

রুমাল-দেশলাইয়ের জুলুমে তটস্থ যাত্রীরা

ক’দিন আগেই সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হাবড়া স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল হাবড়া-শিয়ালদহ লোকাল। ট্রেনটির একটি কামরায় সিটের এক ধারে বসে এক যুবক। তাঁর আশেপাশে কোনও যাত্রী নেই। অথচ সিটগুলির উপরে রয়েছে পলিথিন ব্যাগ, রুমাল, খবরের কাগজ, মাফলার, থলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫২
জবর-দখল: এ ভাবেই রাখা হয় জায়গা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

জবর-দখল: এ ভাবেই রাখা হয় জায়গা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিত্যযাত্রীদের একাংশের ‘দাদাগিরি’, জুলুমবাজি চলছেই ট্রেনের কামরায়। ছাতা, চিরুনি, টুপি, মাফলার, দেশলাইয়ের বাক্স, সিগারেট রেখে বেআইনি ভাবে সিট দখল রাখছেন তাঁরা। বহু ধরপাকড়ের পরেও যাত্রীদের একাংশের এই প্রবণতার উপরে রাশ টানতে হিমসিম খাচ্ছে রেলপুলিশও।

ক’দিন আগেই সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হাবড়া স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল হাবড়া-শিয়ালদহ লোকাল। ট্রেনটির একটি কামরায় সিটের এক ধারে বসে এক যুবক। তাঁর আশেপাশে কোনও যাত্রী নেই। অথচ সিটগুলির উপরে রয়েছে পলিথিন ব্যাগ, রুমাল, খবরের কাগজ, মাফলার, থলে। ওই সব জিনিসপত্র দিয়ে জায়গা ‘বুক’ করে রাখা হয়েছে। যুবকটিই সিট দখল রেখেছেন কিনা, বোঝা গেল না। অন্য যাত্রীরা কামরায় উঠে সিট দখল করা আছে দেখে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তাঁরা জানেন, জিনিসপত্র সরিয়ে বসতে গেলে উড়ে আসবে কটূক্তি। ধাক্কাধাক্কিও খেতে হতে পারে।

৮টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ে দেখা গেল তখনও বেশ কিছু ব্যাগ, রুমাল সিটেই রয়েছে। লোক নেই। অথচ অন্য যাত্রীরাও দাঁড়িয়ে আছেন। জানা গেল, ওই সব সিটে পরবর্তী স্টেশন থেকে যাত্রী উঠবেন। শুধু ওই কামরাটিই নয়, প্রায় প্রতিটি কামরাতেই সিট দখলের এক ছবি। জানলার পাশে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর পাশের তিনটি সিট ‘বুক’ করে রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি জানালেন, কেউ একজন এসে এগুলি রেখে গিয়েছেন। মহিলা কামরায় অবশ্য এই ভাবে ‘সিট বুকিং’ চোখে পড়েনি। যা আগে খুবই দেখা যেত।

যাত্রীরা জানান, সিটে লোক না থাকলেও জায়গা মেলে না। অনুরোধ বা প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হয় না। এখন ব্যাপারটা খানিক গা সওয়া হয়ে গিয়েছে বাকিদের কাছে। তবে সকলেরই দাবি, নতুন বছরে এ সব উৎপাত বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করুক রেল পুলিশ।

সকালের হাবড়া লোকালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিত্যযাত্রীর সাফাই, ‘‘দিনের বেশির ভাগ সময়টা আমাদের ট্রেনেই কাটে। আমাদের দলের কেউ আগে স্টেশনে পৌঁছলে তিনি আমাদের জন্য জায়গা রেখে দেন। যাতে আমাদের ট্রেনযাত্রাটা অন্তত একটু আরামদায়ক হয়। তবে অন্য কোনও যাত্রী বসতে চাইলে আমরা তাঁকে বসতে দিই।’’

হাবড়া লোকালে বেআইনি ভাবে সিট দখল করে রাখা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। মাঝে মধ্যে জিআরপি ও আরপিএফ অভিযান চালায়। ধরপাকড় হয়। কিছু দিন সব ঠিকঠাক চলে। কিন্তু রেল পুলিশের নজরদারি কমলে ফের বেআইনি সিট বুকিং শুরু করেন অনেকে।

যেমনটা হয়েছিল জুলাই মাসে। বনগাঁর এক যুবক রেলমন্ত্রকে টুইট করে বনগাঁ লোকালের এই বেআইনি সিট বুকিং-সহ অন্য নানা সমস্যার কথা জানান। রেলমন্ত্রক আরপিএফকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। শুরু হয় বনগাঁ লোকাল ও হাবড়া লোকালে অভিযান। জিআরপি ও আরপিএফ যৌথ ভাবে তল্লাশি চালিয়ে কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। প্রচুর মালপত্র বাজেয়াপ্ত হয়। বনগাঁ লোকালে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ইদানীং হাবড়া লোকালে ফের ফিরে এসেছে সিট বুকিংয়ের রমরমা।

সাধারণ যাত্রীরা মনে করেন, রেল পুলিশের নিয়মিত অভিযান ছাড়া হাবড়া লোকালে এই প্রবণতা বন্ধ হবে না। নিত্যযাত্রীদের একাংশের ওই জুলুমের ফলে তাঁরা সুষ্ঠু ভাবে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারেন না।

জিআরপি ও আরপিএফ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযান জারি থাকে। তবে আরও নজরদারি চালানো হবে।

Local Train Passengers Seat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy