Advertisement
E-Paper

cyclone Jawad: ঝড় না এলেও, বৃষ্টিতে ফিরে এল বাঁধ ভাঙার সেই ছবি

এমনিতেই ইয়াসের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি দুই জেলার বহু বাসিন্দা। তার মধ্যে ফের বিপর্যয়ের মুখে অনেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৫
বিপর্যস্ত: রাস্তার মাটি ধুয়ে মৌসুনির বালিয়াড়া গ্রামে ঢুকছে চিনাই নদীর জল।

বিপর্যস্ত: রাস্তার মাটি ধুয়ে মৌসুনির বালিয়াড়া গ্রামে ঢুকছে চিনাই নদীর জল। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।

বড়সড় ঝড় আসেনি। তাতেই কাবু দুই ২৪ পরগনার নানা এলাকায় নদী ও সমুদ্রবাঁধ।

এমনিতেই ইয়াসের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি দুই জেলার বহু বাসিন্দা। তার মধ্যে ফের বিপর্যয়ের মুখে অনেকে। নিম্নচাপ ও অমাবস্যার কটালের জোড়া প্রভাবে শনিবার রাত থেকে একাধিক জায়গায় নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। ইয়াসের পরে দুর্বল বাঁধ মেরামতে জোর দিলে এ বার বিপর্যয় এড়ানো যেত বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের আশঙ্কা, রবিবার রাতের জোয়ারে বিপদ আরও বাড়তে পারে।

নামখানার মৌসুনির বালিয়াড়ায় রবিবার একশো মিটার নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। চিনাই নদীর জল ঢুকে ভাসিয়ে দিয়েছে পুকুর, চাষের জমি ও পর্যটকদের জন্য নতুন গড়ে ওঠা হোম স্টে, কটেজগুলি। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি বাড়ি। মাছ এবং পান চাষের ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত জল না-নামলে জলমগ্ন বাড়িগুলির গোড়ার মাটি বসে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

নামখানার নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে। বাসিন্দারা জানান, ইয়াসের সময়ে এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত সারানো হয়নি। সেচ দফতর সূত্রের খবর, জমিজটে ওই এলাকায় বাঁধের কাজ আটকে রয়েছে। তবে এই দুর্যোগে জল ঢোকায় বাসিন্দারা জমি দিতে রাজি হয়েছেন বলে দফতর সূত্রের খবর। দুর্যোগ কেটে গেলে পাকাপোক্ত বাঁধের কাজ হবে। মৌসুনি, নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও এই মহকুমায় বোটখালি, মহিষামারি, চকফুলডুবি এলাকায় জল ঢুকেছে।

সাগর থানার পক্ষ থেকে কচুবেরিয়া নদী পাড়ে এ দিনও মাইকে প্রচার করে বাসিন্দাদের ফ্লাড শেল্টারে যেতে বলা হয়েছে। মুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসেল পরিষেবা আপাতত বন্ধ থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ দিন সকালে জোয়ারের সময় সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে নোঙর করা একটি পণ্যবাহী নৌকো মুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায়। তবে নৌকোয় কেউ ছিলেন না। সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে প্রায় তিন হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হয়েছে। ওই দ্বীপের নদীবাঁধের অবস্থাও খারাপ। ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর জানান, বিপর্যয় মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হয়েছে।

পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েতের সীতারামপুর, গোবর্ধনপুর ও বুড়োবুড়ির তট এলাকায় আগে থেকেই নদী ও সমুদ্র বাঁধে ভাঙন ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জল বাড়লে ওই ভাঙন দিয়ে মাঝে মধ্যেই এলাকায় ঢুকে পড়ত। এ দিনও বাঁধ উপচে কিছু এলাকায় জল ঢুকেছে। পাথরপ্রতিমা ব্লকের ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রমোহনপুরে স্বপন দাসের টেকার কাছে কার্জন ক্লিক নদীর বাঁধে প্রায় একশো ফুট জুড়ে ধস নেমেছে। পঞ্চায়তে প্রধান পরিমল ডাকুয়া জানান, ধস মেরামতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “কাকদ্বীপ মহকুমার বেশ কয়েকটি জায়গায় জল ঢুকেছে। কিন্তু তেমন ক্ষতি হয়নি। সেচ দফতরের তরফে খারাপ হয়ে যাওয়া বাঁধগুলি মেরামত করা হচ্ছে।’’ শনিবার রাতে জোয়ারের সময়ে জল বাড়ায় গোসাবার কুমিরমারি পঞ্চায়েতের কোরানখালি নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। নোনা জল ঢুকে প্লাবিত হয় কুমিরমারি দক্ষিণপাড়ার বেশ কিছুটা অংশ। রাতেই সেচ দফতরের কর্মীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাহায্যে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেন। কিন্তু জোয়ার থাকায় কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। রবিবার দুপুর থেকে ফের কাজ শুরু করে সেচ দফতর। ঘটনাস্থলে আসেন বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরী ও বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। ভেঙে যাওয়া বাঁধের পিছনে একটি রিং বাঁধও দেওয়া হয়েছে। বিডিও বলেন, “গোসাবা ব্লকে এই একটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও নদীবাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকেনি। এই ভাঙনও সেচ দফতর ও স্থানীয় মানুষের সাহায্যে দ্রুত মেরামত করা হয়েছে। যাতে নতুন করে বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত না হয়, সে কারণে একটি রিং বাঁধেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনের ২৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছে।

হিঙ্গলগঞ্জে গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধে প্রায় ৫০ ফুট অংশ জুড়ে ফাটল দেখা দেয় রবিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমপানের রাতে বাঁধের উপরে শুয়ে ঢেউ আটকে বাঁধ রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে বাঁধের তেমন কোনও সংস্কার হয়নি। ইয়াসের ধাক্কায় আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে বাঁধটি। দীর্ঘ টালবাহানার পরে কিছু অংশে বাঁশের পাইলিং করা হয়। তবে অনেক জায়গায় ঠিক মতো মাটি পড়েনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও রবিবার পর্যন্ত মেরামতের কাজ শুরু হয়নি বলেও জানান মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা রিনা মণ্ডল বলেন “বাঁধ এমনিতেই বহুদিন ধরে দুর্বল। তার উপরে আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। বাড়িতে থাকতে ভয় করছে। আমপান ও ইয়াসের রাতের ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা মনে পড়ছে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “বাঁধের পাশে পুকুর থাকায় মাটি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। কাছাকাছি মাটি পাওয়া যায়নি। তাই বাঁধের সব জায়গায় পর্যাপ্ত মাটি দেওয়া যায়নি।” ফাটলের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান জয়ন্ত।

গৌড়েশ্বর নদীবাঁধের একটি জায়গায় ইয়াসের পরে গর্ত হয়েছিল। তা এতদিনেও মেরামত হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন জল বেড়ে সেই গর্ত দিয়েও ঢুকেছে এলাকায়। কয়েকটি পুকুর ডুবে গিয়েছে। পুকুর ছাপিয়ে বাড়ির উঠোন, চাষের জমিতেও চলে এসেছে নোনা জল। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, “বাঁধের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার ঘটনাস্থলে যাব। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

Cyclone Jawad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy