Advertisement
E-Paper

Illegal: কার দেহ দাহ হল, খবর রাখে না কেউ

এলাকাবাসী জানান, এখানে দাহ করতে চিকিৎসকের কোনও শংসাপত্র লাগে না। কবে, কখন, কার দেহ সৎকার হচ্ছে— কোনও নথি রাখারও ব্যবস্থা নেই।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৮:২৯
বেহাল: নজরদারি ছাড়াই সৎকার চলে এই শ্মশানে।

বেহাল: নজরদারি ছাড়াই সৎকার চলে এই শ্মশানে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

গুগল ম্যাপের তথ্য অনুযায়ী, নদিয়ার হাঁসখালি থেকে বাগদা ব্লকের সিন্দ্রাণী এলাকার দূরত্ব মাত্র ২৪ কিলোমিটার। এখানে স্থানীয় সাঁড়াহটি-পুস্তিঘাটা সড়কের পাশেই রয়েছে খয়রামারি শ্মশান। হাঁসখালির মতো এই শ্মশানেও সৎকারের ব্যাপারে কারও কোনও নজরদারি নেই। যে কেউ এসে দেহ দাহ করে চলে যেতে পারেন। কাগজপত্র দেখানোর কোনও বালাই নেই।

শ্মশানটির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নাব্যতা হারানো ইছামতী নদী। নির্জন এলাকা। আশপাশে বাড়িঘর নেই। পাশে একটি কালী মন্দির। সৎকারের জায়গা বলতে সিমেন্টের বেদি এবং লোহার তার জালি। উপরে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। শ্মশান যাত্রীদের বসার জায়গা নেই। দেহ পোড়ানোর সময়ে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।

এলাকাবাসী জানালেন, এখানে দাহ করতে চিকিৎসকের কোনও শংসাপত্র লাগে না। কবে, কখন, কার দেহ সৎকার হচ্ছে— কোনও নথি রাখারও ব্যবস্থা নেই। তাঁরা জানান, আগে খোলা জায়গায় দাহ হত। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাউনি বসেছে। চুল্লিটি কংক্রিটের করা হয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, মৃতদেহের শংসাপত্র যাচাই না হওয়ায় যে কোনও দিন এখানেও হাঁসখালির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘চল্লিশ বছরের পুরনো খয়রামারি শ্মশান। নিয়মিত দাহ হয়। কিন্তু কোনও নজরদারি নেই। আমাদের দাবি, পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নজরদারির ব্যবস্থা করা হোক। নথিবদ্ধ হোক মৃতদেহের নাম-ঠিকানা।’’ স্থানীয় শিক্ষক গৌর রায় বলেন, ‘‘বছর দশ-বারো আগে শ্মশানের কিছুটা সংস্কার হয়। মূলত এলাকার গরিব মানুষেরা দাহ করেন এখানে। তবে শ্মশানের কাজ বা কাগজপত্র পরীক্ষা করার মতো কেউ নেই।’’

শ্মশানটি সীমান্ত ঘেঁষা। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, খরয়ামারি রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশিরাও এখানে দেহ সৎকার করে যেতে পারেন। দেহ লোপাট করার জন্যও এই শ্মশান ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকেরই।

সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েত এলাকার পারমাদনে কয়েক মাস আগে বৃদ্ধা শিবাণী মণ্ডলের মৃত্যু হয়। তাঁকে ৬০ কিলোমিটার দূরে নবদ্বীপ শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাতে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান শ্মশানযাত্রীদের ১৩ জন। ওই ঘটনার পর থেকে খয়রামারি শ্মশানে দাহ করার সংখ্যা বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খয়রামারি শ্মশানের পরিকাঠামো বাড়ানোরও দাবি তুলছেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পারমাদন-সহ সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের প্রাচীন সংস্কার, দেহের সৎকার হবে নবদ্বীপের শ্মশানে। যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁরা দেহ নিয়ে নবদ্বীপ যান। তা ছাড়া, নদিয়ার হাঁসখালি থানার দত্তপুলিয়া শ্মশানেও অনেকে যান। মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ শ্মশানে ইলেকট্রিক চুল্লি থাকা সত্ত্বেও মানুষ সেখানে যেতে চান না। যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি কম, তাঁরা খয়রামারি শ্মশানে দেহ দাহ করেন।

বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘শ্মশানটির পরিকাঠামো বাড়াতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রধানকে বলা হয়েছে, শ্মশানে নজরদারির ব্যবস্থা করতে। যাঁদের দেহ পোড়ানো হবে, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকে সমীক্ষা করা হয়েছে। প্রায় ২২ লক্ষ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই শ্মশানের পরিকাঠামো বাড়ানো হবে। পঞ্চায়েত প্রধান সৌমেন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করব। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কর্মী রাখা হবে। তিনি সৎকারের উপরে নজরদারি রাখবেন। তথ্য নথিভুক্ত করবেন।’’

dead bodies Illegal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy