বাবা সফিক আলিকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মেয়ে। ফাইল চিত্র।
হাসপাতালে ভর্তি হয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যু। বাড়ি ফিরে আবার জ্বর আসছে। দ্বিতীয়বার ঘুরে জ্বর এলে তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।
রবি ও সোমবার দেগঙ্গা-বাদুড়িয়ায় যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দু’জনের চিকিৎসা হয়েছে হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলার পরে। কী ভাবে জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যু ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে দিশেহারা মানুষ। উপায় খুঁজতে ব্যস্ত চিকিৎসকেরাও। সরকারি ব্যবস্থার উপরে আর ভরসা না রাখতে পেরে জায়গায় জায়গায় হোম-যজ্ঞ করছেন মানুষ।
চাকলা পঞ্চায়েতের সুবর্ণপুর গ্রামের লিচুতলায় কয়েক দিন আগে একই পরিবারের মা-ছেলে-বৌমা জ্বরে পড়েন। বৌমা পদ্ম বিবি মারাও যান। তাঁর শাশুড়ি নুরজাহান বিবির (৭০) চিকিৎসা চলছিল বারাসত জেলা হাসপাতালে। দিন সাতেক আগে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের অসুস্থ হওয়ায় ভর্তি করা হয়েছিল একটি নার্সিংহোমে। সেখান থেকেও বাড়ি ফেরেন নুরজাহান। রবিবার ফের জ্বর আসে। রাতের দিকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে সুস্থ করে আনার পরে ফের অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন নুরনগর পঞ্চায়েতের মোহনপুর মাঝেরপাড়ার মাফুরা বিবিও (৫২)। রবিবার রাতে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
দেগঙ্গার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের কেয়াডাঙা চাঁদপুরের সফিক আলি মোড়ল (৪৭) দিন কয়েক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শনিবার হাড়োয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রবিবার দুপুরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। রাতে সেখানেই মারা যান সফিক। মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে, ‘এনএস-১ পজিটিভ।’
সফিকের ছেলে রেজাউল ইসলাম বলেন, হাড়োয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাবার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হলেও তা আমাদের আগে জানানো হয়নি। যখন জানলাম, কলকাতায় নিয়ে গিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।’’
চৌরাশি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মাটিকুমড়া গ্রামের আচিয়া বিবি (৫৭) তিন দিন আগে জ্বরে পড়েন। স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা চলছিল। রবিবার জ্বর না কমায় সকালে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আরজিকরে নিয়ে গেলে রাতে মারা যান আচিয়া।
তাঁর মেয়ে নাজিমা বলেন, ‘‘সন্ধে ৬টায় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখল রাত ৯টায়। চিকিৎসা না পেয়েই চলে গেল মা।’’
জ্বরে ভুগে প্রাক্তন এক ফুটবলারের মৃত্যু হয়েছে হাসনাবাদের জলসেরিয়া গ্রামে। মৃতের নাম জোনায়েদ গাজি (৩৪)। গত কয়েক দিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্তের পরীক্ষায় প্লেটলেট কম ছিল। তাঁকে পাঠানো হয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
পরিবারের অভিযোগ, সেখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ভয়ের কিছু নেই। বাড়ি ফিরে রবিবার সকালে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন জোনায়েদ। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কলকাতা লিগে বিভিন্ন দলের হয়ে ফুটবল খেলেছেন জোনায়েদ। এক সময়ে বসিরহাটের ঘরোয়া লিগেও সুনাম ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy