Advertisement
E-Paper

আরোগ্য নিকেতনের মৃত্যু, পাঁচ বছর ধরে পরিষেবা চিকিৎসা পরিষেবায় পিছিয়ে গোবরডাঙা

রোগী ভর্তির ব্যবস্থা বা ইনডোর বিভাগ। এরপরে বহু আবেদন-আন্দোলনের পরেও হাল ফেরেনি হাসপাতালের। বরং ধীরে ধীরে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা গোবরডাঙা হাসপাতালে।

সীমান্ত মৈত্র 

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৭
জীর্ণ: এক কালে রমরম করত হাসপাতালের এই চত্বর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

জীর্ণ: এক কালে রমরম করত হাসপাতালের এই চত্বর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

জ্বর-ডেঙ্গিতে কাঁপছে গোটা জেলা। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে গত কয়েক মাস ধরে। তুলনায় কম হলেও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন গোবরডাঙার অনেকেই। কিন্তু হাতের কাছে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সেখানে পরিষেবা না পেয়ে হতাশ তাঁরা।

সালটা ছিল, ২০১৪। সে বছরের ৪ নভেম্বর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে

রোগী ভর্তির ব্যবস্থা বা ইনডোর বিভাগ। এরপরে বহু আবেদন-আন্দোলনের পরেও হাল ফেরেনি হাসপাতালের। বরং ধীরে ধীরে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা গোবরডাঙা হাসপাতালে। এখন একমাত্র চিকিৎসক সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন দিনের বেলায় কয়েক ঘণ্টা আউটডোরে রোগী দেখেন। সরকারি ছুটির দিন তাঁকে পাওয়া যায় না।

এলাকার মানুষের দাবি, হাসপাতালটি ফের পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করা হোক। এই দাবিতে বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ। পরিষদের তরফে সম্প্রতি ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালন করা হয়েছে। পরিষদের প্রতিনিধিরা গোবরডাঙা থানায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হাসপাতাল খোলার অনুরোধ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে।

২০১৭ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরের প্রশাসনকি সভায় গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। পুরপ্রধানের প্রশ্ন ছিল, হাসপাতাল নিয়ে তিনি এলাকার মানুষকে কী জানাবেন? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘বলে দেবেন হাসপাতাল হবে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর সে দিনের কথায় আহত হন গোবরডাঙাবাসী। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পথে নেমে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ মানুষ। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাও তাতে দলীয় পতাকা ছাড়া সামিল হয়েছিলেন। প্রতিবাদ ঝলসে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ ও হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির ডাকে এলাকায় বন‌্ধ পালিত হয়। তাতে সাড়াও মেলে ভাল।

এরপরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে সুভাষকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান। তা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল সে সময়ে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে সুভাষ তাঁর সঙ্গে দেখা করলে বরফ গলে। ফের পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেনে সুভাষ।

লোকসভা ভোটে গোবরডাঙায় এ বার শাসক দলের ভরাডুবি হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, এর পিছনে আছে হাসপাতাল নিয়ে মানুষের ক্ষোভ। বিজেপির তরফে সম্প্রতি হাসপাতাল চালুর দাবিতে সাত দিনে অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আন্দোলন করেছে বামেরাও। পৌর উন্নয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পোস্টকার্ডে প্রায় ৮ হাজার চিঠি পাঠিয়ে হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার অনুরোধ করেছেন।

তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। ‘দিদি বলো’ কর্মসূচিতে জানিয়েও ফল হয়নি। হতাশ হয়ে কবিতা লিখে ফেলেছেন পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্রকুমার মুখোপাধ্যায়। ‘আট হাজার চিঠি গেল দিদির কাছে ভাই/ একটিও তো চিঠির জবাব ফেরত আসে নাই।’

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাদে খাটুরার বাসিন্দা মনোহর বসাকের কিছু দিন আগে জ্বর এসেছিল। স্থানীয় ভাবে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। গাইঘাটার চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করান। পরে যেতে হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘হাতের কাছে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে এই ভোগান্তি।’’ স্থানীয় মানুষজন অনেকেই জানালেন, অসুস্থ হয়ে হাবড়া বা বনগাঁ হাসপাতালে ছুটতে হয়। তাতে পথখরচ বেশি। সময়ও লাগে। অসুস্থ শরীরে দৌড়োদৌড়ির ভোগান্তি তো আছেই!

হাসপাতাল চালু নিয়ে গোবরডাঙা শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘পুরমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করতে পদক্ষেপ করছেন।’’ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, গোবরডাঙার হাসপাতাল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর পুর হাসপাতাল হিসাবে চালু করবে। এখন ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে।

Gobardanga Hospital Dengue Medical Treatment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy