অঘটন: জ্বলছে ঘর। মঙ্গলবার, ব্যারাকপুরের বুড়ির বাজার বস্তিতে। ছবি: মাসুম আখতার
একচিলতে ঘর। বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। সামান্য আয়ের মধ্যেও স্বপ্ন দেখছিলেন দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার। সেই জন্য বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা তুলে রেখেছিলেন ঘরের আলমারিতে। দুই মেয়েরই বোর্ডের পরীক্ষা আগামী মাসে। এক জন দশম শ্রেণির ছাত্রী, অন্য জন দ্বাদশের। কিন্তু মঙ্গলবারের ভয়াল আগুনে শুধু ঘরই পুড়ল না। পাঠ্যবই, নোটস— সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় পরীক্ষার মুখে চরম সঙ্কটে ঠেলে দিল দুই স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীকেও।
এ দিন সকালে ব্যারাকপুরের বুড়ির বাজার বস্তিতে ওই আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে ২২টি ঘর। প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকল জানিয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগে। যদিও বস্তিবাসীদের একাংশের দাবি, একটি ঘরে সেই সময়ে রান্না হচ্ছিল। সেখানে প্রথমে আগুন লাগে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই মজুত ছিল ত্রিপল-সহ নানা দাহ্য বস্তু। ফলে নিমেষের মধ্যে বস্তির বাকি ঘরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এক সময়ে একটি গ্যাস সিলিন্ডারও ফাটে বলে দাবি বাসিন্দাদের। আগুন নেভাতে ছুটে আসে দমকলের চারটি এবং বিমানবাহিনীর দমকলের দু’টি ইঞ্জিন।
ওই বস্তিতেই থাকেন পেশায় শ্রমিক কনকচন্দ্র নাগ। তাঁর বড় মেয়ে, দ্বাদশ শ্রেণির সুরঙ্গনার সিবিএসই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ৪ মে। সুরঙ্গনার বোন, দশম শ্রেণির ছাত্রী করুণার আইসিএসই শুরু হওয়ার কথা ৫ মে। কিন্তু পরীক্ষার ঠিক মুখে এমন বিপর্যয়ে দিশাহারা দুই বোন।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পরীক্ষার নোটস কিছু আস্ত আছে কি না, ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ছাইয়ের গাদা থেকে তা খুঁজে দেখতে ব্যস্ত সুরঙ্গনা ও করুণা। কনক জানালেন, এ দিন মেয়েদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস থাকায় তাদের স্কুলে পৌঁছতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে দেখেন, জ্বলছে গোটা বস্তি। কনক বলেন, ‘‘বোর্ডের পরীক্ষার পরে মেয়েরা নতুন ক্লাসে ভর্তি হবে। ওদের পড়ার খরচের জন্য ঋণ নেওয়া টাকা আলাদা করে আলমারিতে রেখে দিয়েছিলাম। সব পুড়ে গিয়েছে। সব চেয়ে চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে যে, পরীক্ষার মুখে মেয়েগুলোর বইপত্র ছাই হয়ে গেল। কী ভাবে ওরা পরীক্ষা দেবে?’’
সামান্য আয়ের মধ্যেও কষ্টেসৃষ্টে মেয়েদের একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন কনক। আগুনে ঝলসে গিয়েছে সেটিও। হতাশ সুরঙ্গনা বলে, ‘‘আমাদের প্রোজেক্ট ওয়ার্ক, নোটস, বইখাতা— সব পুড়ে গিয়েছে। ভেবেই উঠতে পারছি না, কী করব। যে ফোনে স্কুলের নম্বর ছিল, সেটাও পুড়ে গিয়েছে।’’
বুড়ির বাজার বস্তির অদূরেই থাকেন শান্তি যাদব। তিনি বলেন, ‘‘আগুনের শিখা আশপাশের বাড়ির জানলার কাঠ পর্যন্ত ঝলসে দিয়েছে।’’ ভোটের মুখে এই ঘটনার পরে এ দিন ওই বস্তিতে ছুটে যান সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। বাসিন্দারা জানান, আমপানেও তাঁদের বেশির ভাগের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে নতুন করে মাথার উপরে ছাউনি করেছিলেন। এ দিন ফের আশ্রয়হীন হলেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy