Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে বিভিন্ন জায়গায়, তবু বানভাসি হওয়ার আশ‌ঙ্কা

জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁধ বাঁচাতে কাজ শুরু করার কথা ছিল বর্ষার আগে। কিন্তু তা হয়নি। জুন থেকে বর্ষা ঢুকে যাওয়ার পরেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে বাঁধের কাজে হাত পড়েনি।

মৌসুনি দ্বীপে বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়েছে জল। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

মৌসুনি দ্বীপে বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়েছে জল। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁধ বাঁচাতে কাজ শুরু করার কথা ছিল বর্ষার আগে। কিন্তু তা হয়নি। জুন থেকে বর্ষা ঢুকে যাওয়ার পরেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে বাঁধের কাজে হাত পড়েনি। যে সমস্ত জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে, তা-ও ব্যাহত হচ্ছে নানা কারণে। কয়েকটি জায়গায় কোনও রকমে দায়সারা কাজ করারও অভিযোগ উঠছে সেচ দফতরের বিরুদ্ধে। কয়েকটি জায়গায় জমিজটের জন্য আটকে গিয়েছে বাঁধ তৈরির কাজ।

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের দফতর সব সময়েই কাজ করছে। জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকার সব জায়গায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে বর্ষার জন্য কিছু জায়গায় কাজ ব্যাহতও হচ্ছে। নতুন করে যে সমস্ত এলাকায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং যে এলাকাগুলিতে সমস্যা রয়েছে, সেখানে আবারও কাজ করা হবে।’’

ভরা বর্ষাতেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায় নদীবাঁধ মেরামতের কাজ। কিন্তু কাজের গতি একেবারেই কম। কিছু এলাকায় কাজই হয়নি বলে অভিযোগ। কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার মহকুমার কয়েকটি ব্লকে সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। কাকদ্বীপ ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ প্রত্যেক বছরই ভাসে। প্রতিবছরই জোড়াতালি দেওয়া কাজ হয়। গত বছরই বালিয়ারা মৌজায় মুড়িগঙ্গার দিকে বাবলু পয়েন্ট থেকে ১৩ নম্বর সয়েল বাঁধ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকা ধুয়ে সাফ হয়ে গিয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত জল ঢুকছে। পূর্বে চিনাই নদীর দিকে সল্টঘেরি থেকে ১১ নম্বর সয়েলবাঁধ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোনও দিন তা ভাঙতে পারে।

মৌসুনি পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে অল্প কাজ করা যায়। কিন্তু আয়লার পর থেকে প্রতি বছরই বলা হয় কাজ হবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয় না। আগে লঙ্কা, ধান, তরমুজ, শশা, কুমড়োর মতো বেশ কয়েকটি সব্জি চাষ হত। এখন তা ভুলে গিয়েছে মানুষ। ভাঙতে ভাঙতে দ্বীপের সীমানা ছোট হয়ে গিয়েছে।’’ কাকদ্বীপের এই প্রত্যন্ত দ্বীপে বাস করেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। মৌসুনির পয়লাঘেরি, কুসুমতলা, বাগডাঙার মতো এলাকাগুলিতে বাঁধের মেরামতিতে কিছুটা জোড়াতালি দেওয়ার কাজ সেচ দফতর থেকে হয়েছে। বর্ষায় কাজ প্রসঙ্গে কাকদ্বীপ ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (সেচ) শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘বর্ষার জন্য কিছু এলাকায় ছোট ছোট মেরামতির কাজ চলছে। প্রয়োজন হলে আরও কাজ হবে। বর্ষার পরে কিছু বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা।’’

পাথরপ্রতিমা ব্লকের প্রত্যন্ত জি প্লট, এল প্লট এলাকায় নদীবাঁধের সমস্যা আছে। বর্ষার জন্য বার বার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দ্রপুর, সীতারামপুর ঘাট, গোবর্ধনপুর এলাকায় বাঁধের কাজ কিছুটা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ সীতারামপুর, কৃষ্ণদাসপুর, দক্ষিণ সুরেন্দ্রগঞ্জের মতো এলাকায় নদী বাঁধের কাজ একেবারেই হয়নি। এল প্লটের শ্রীধরনগর পঞ্চায়েতের উপেন্দ্র নগরে কিছুটা কাজ হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে জগদ্দল নদীর বাঁধে কাজ হয়নি। এলাকার বাসিন্দা রবীন রঞ্জিত বলেন, ‘‘ধনচি ফরেস্ট অফিস থেকে শুরু করে কয়ালবাজার পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে অর্ধেকটা খুবই খারাপ। কয়েকটি জায়গায় বাঁধের অবস্থা এতটাই ভাঙাচোরা, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে জল ঢুকতে পারে।’’

কুলপি ব্লকের হারা থেকে রায়তলা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় নদীবাঁধ মেরামতির কথা ছিল। তার বড় অংশেই অবশ্য কাজ হয়েছে। রামকিশোর পঞ্চায়েতের হরিনারায়ণপুর গ্রামে কিছুটা অংশে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। শুধু মাত্র দুই কন্ট্রাক্টরের এলাকা চিহ্নিত করার সমস্যা নিয়ে ওই কাজ বন্ধ ছিল। তারপর সেচ দফতর নতুন করে টেন্ডার করে কাজ শুরু করেছে।

যদিও তা নিয়েও কিছু আপত্তি আছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ হালদারের দাবি, খারাপ মানের ইট দিয়ে কাজ হচ্ছে। বর্ষার সময় কাজ বলে বেশিরভাগ সময় কাজ করা যাচ্ছে না এবং মাটি ধসে যাওয়ার জন্যও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যে ভাবে কাজ চলছে, তাতে হুগলির মূল স্রোতের জলের তোড়ে ধাক্কায় ইটের ব্লকগুলি ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে।

নদীবাঁধের ব্লকগুলি বাঁচাতে বোল্ডার ফেলার কথা হয়েছিল। কিন্তু এলাকা ঘুরে তা অবশ্য চোখে পড়ল না। কুলপিতে নদীবাঁধ সারাই প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবার ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (সেচ) আশিস দত্ত বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা থাকলে আমরা সেগুলি খতিয়ে দেখছি।’’

প্রত্যন্ত সাগরদ্বীপের বোটখালি, বেগুয়াখালি এলাকাতেও নদীবাঁধ ভাঙনের সমস্যা চিরন্তন। সেচ দফতরের বাঁধ জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের বেগুয়াখালি মৌজায় লাইটহাউজের দু’দিকেই প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রয়েছে। জোয়ার ভাটায় জল ওঠানামা করে এই এলাকায়। কয়েকটি জায়গায় কাজ হয়েছে।

তবে আয়লার বাঁধ প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার জন্য অনেকেই জমি দিতে আপত্তি করছেন। ধবলাট পঞ্চায়েতের বোটখালি এলাকায় মনসা মন্দিরের দক্ষিণ থেকে অনেকটা এলাকাও বাঁধ ভেঙেচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকায় বেশিরভাগ মৎস্যজীবীদের বাস। মা গঙ্গা মেরিন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নেতা সমরেশ দাস বলেন, ‘‘নানা সমস্যায় কাজ আটকে গিয়ে বেশ কিছু পানের বরজ, ধানের চাষ মার খাচ্ছে। জোয়ারের সময় অনেকটা এলাকাতেই জল ঢুকে যায়।’’

ক্ষতিপূরণ যে সমস্ত এলাকায় বাকি রয়েছে সেগুলিও দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সেচ কর্তারা। দফতর সূত্রে জমির সমস্যা মেনে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, বাঁধের স্থায়ী কাজ করতে গেলে স্বেচ্ছায় জমি দিতে হবে এলাকাবাসীকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE