Advertisement
E-Paper

ভুয়ো ভোটার কার্ড চক্রের হদিস বনগাঁয়

ভুয়ো ভারতীয় ভোটার কার্ড  তৈরি করে চড়া দামে বিক্রি করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে বনগাঁর উত্তর পাইকপাড়া থেকে অরূপ বিশ্বাস নামে এক জনকে ধরেছে পুলিশ।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এক দিকে বিএসএফ, গোয়েন্দা, পুলিশ চোরাপথে এ দেশে আসা বাংলাদেশিদের ধরছে। অন্য দিকে, তারাই টাকা ফেলে ভুয়ো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড তৈরি করে আদালতে নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।

জাল ভোটার কার্ড তৈরির চক্রের একজনকে গ্রেফতার করে বনগাঁ থানার পুলিশ আরও যে তথ্য পেয়েছে, তা চোখ কপালে ওঠার মতো। ভুয়ো পরিচয়পত্র দালালের মারফত পৌঁছে যাচ্ছে আদালতের কিছু মুহুরির কাছে। যারা আবার আইনজীবীদের মাধ্যমে ওই নথিপত্র আদালতে পেশ করে জামিনের আবেদনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়ার পিছনে হাজার হাজার টাকার খেলা চলছে বলেই পুলিশের তদন্তে সামনে এসেছে।

ভুয়ো ভারতীয় ভোটার কার্ড তৈরি করে চড়া দামে বিক্রি করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে বনগাঁর উত্তর পাইকপাড়া থেকে অরূপ বিশ্বাস নামে এক জনকে ধরেছে পুলিশ। সে নিজের বাড়িতে ভুয়ো ভোটার কার্ড বানাত। তার কাছ থেকে প্রচুর ভুয়ো ভারতীয় ভোটার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। কম্পিউটার ও প্রিন্টার আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। শুক্রবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক অরূপকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, জেরায় তাঁরা জানতে পেরেছেন, দালালেরা খদ্দের ধরে আনত অরূপের কাছে। নির্দিষ্ট হলোগ্রাম, ল্যামিনেশন কাগজ— সব কিছু দালালেরাই সরবরাহ করত। সে শুধু কার্ড তৈরি করে দালালদের কাছে পৌঁছে দিত। কার্ড প্রতি মিলত দেড়শো টাকা।

পুলিশের দাবি, দালালদের মাধ্যমে সেই ভুয়ো পরিচয়পত্র পৌঁছে যেত বনগাঁ আদালতের কিছু মুহুরির কাছে। অরূপ পুলিশকে তিন জনের নামও জানিয়েছে।

ধৃতকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, চোরাপথে দালাল ধরে এ দেশে আসার সময়ে বা ঢোকার পরে যে সব বাংলাদেশি ধরা পড়ে যায়, তাদের জন্যই মূলত ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে বিক্রি করত চক্রের সদস্যেরা। বাংলাদেশিরা মোটা টাকার বিনিময়ে ওই সব ভুয়ো পরিচয় দেখিয়ে আদালতের কাছে নিজেদের এ দেশের বাসিন্দা হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

পুলিশের দাবি, দালালেরা সরাসরি গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ‘পার্টি’ বুঝে এ জন্য দাম নেওয়া হয়। কয়েক হাজার টাকাতেও ভুয়ো ভোটার কার্ড বিক্রি হয়। কিন্তু কী ভাবে ভোটার কার্ডের হলোগ্রাম সংগ্রহ করে দালাল চক্রের সদস্যেরা?

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মানুষ বা অন্যত্র চলে যাওয়া মানুষদের ভোটার পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে দালালেরা। সেখান থেকে হলোগ্রাম জোগাড় করে। বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানান, আইনজীবীদের মাধ্যমে বিচারকের কাছে নথিপত্র পেশ করে ধৃতেরা। কিন্তু আইনজীবীদের পক্ষে সব সময়ে জানা সম্ভব হয় না, ওই নথি আসল কিনা। সে ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবীরা নথি যাচাই করে দেখার জন্য আবেদন জানান আদালতে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। আইন মোতাবেক, দু’মাসের মধ্যে নথি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট না এলে জামিন মঞ্জুর হয়ে যায়। আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, জামিন পেয়ে অনেকে বাংলাদেশে গা ঢাকা দেয় বা দেশের অন্যত্র সরে পড়েও বলে অনেক সময়ে জানা গিয়েছে।

অক্টোবর মাসে গোপালনগর থানার পুলিশ বনগাঁ আদালতের এক মুহুরিকে এই চক্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করেছিল। আদালতে মুহুরিদের একাংশের এই চক্রে জড়িয়ে পড়া দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন আইনজীবীরাও। সমীর জানান, আইনজীবী সংগঠনের পক্ষে এই সব দুর্নীতিগ্রস্ত মুহুরিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পশ্চিমবঙ্গ ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ মহকুমা সম্পাদক অনিল পরামানিক বলেন, ‘‘এই অভিযোগ আমাদেরও কানে আসছে। সংগঠনগত ভাবে খোঁজ নেওয়া হবে। পুলিশ-প্রশাসনকে আমরা তদন্তে সাহায্য করব।’’

Fake Voter Card Racket Bongaon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy