E-Paper

রূপটান চিনিয়ে দিল বিশ বছর আগে নিখোঁজ মাকে

তারপর কেটে গিয়েছে দুই দশক। রাতিয়া ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। কে নিয়ে গিয়েছিল? কী ভাবে গিয়েছিলেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫২
এই অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন রাতিয়া।

এই অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন রাতিয়া।

গঙ্গাসাগরের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষের বহু গল্প শোনা যায় সংবাদপত্রে, পুলিশের ডায়েরিতে, কখনও লোকমুখে। তাঁদের অনেকেই চিরকালের জন্য হারিয়ে যান পরিবারের থেকে। নব্বই বছরের বৃদ্ধা রাতিয়া আহিয়ার পরিজনেরাও তেমনটাই ধরে নিয়েছিলেন। প্রায় বিশ বছর আগে মেলার ভিড়ে হারিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার বান্দা গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা। পরিবারের লোকেরা ধরেই নিয়েছিলেন, আর বেঁচে নেই। হ্যাম রেডিয়োর তৎপরতায় এত দিন পরে বাড়ি ফিরতে চলেছেন তিনি!

পরিজনদের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ থেকে কপিলমুনির আশ্রম দর্শনে এসেছিলেন আহিয়া। কিন্তু মেলার ভিড়ে ঠিক কোথায় আলাদা হয়ে গেলেন— সে স্মৃতি আজ ক্ষীণ তাঁর। পরিজনেরা অনেক খুঁজেছিলেন, তিনিও খুঁজেছিলেন ফেরার পথ। কিন্তু তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল সীমিত, ফলে বাড়ি ফেরা আর হয়ে ওঠেনি।

তারপর কেটে গিয়েছে দুই দশক। রাতিয়া ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। কে নিয়ে গিয়েছিল? কী ভাবে গিয়েছিলেন? তাঁর স্মৃতি সবটা বলে না। মাসখানেক আগে তাঁকে উদ্ধার করেন বাংলাদেশের চাপাইন বাবগঞ্জের এক সমাজকর্মী আব্দুল গনি ফিতু, যিনি হ্যাম রেডিয়োর দীর্ঘদিনের সহযোগী।

সে দিনের অগোছালো, রোদেপোড়া মুখের বৃদ্ধাকে দেখেই খটকা লাগে তাঁর। যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে। শুরু হয় খোঁজ। নাম, গ্রামের আংশিক স্মৃতি, ভাঙাচোরা শব্দ— সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসে মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার নাম।

তবে পরিবারের খোঁজ মেলা কঠিন ছিল। এত দিনে স্বামী বালিচাঁদ ও বড় ছেলে পুরাণের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুই ছেলে ও বৌমা কর্মসূত্রে থাকেন দিল্লিতে। এলাকার মানুষের কাছ থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে ছোট ছেলে রাজেশের সঙ্গে কথা বলেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলায় মায়ের হারিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও রাতিয়ার সাম্প্রতিক ছবি দেখে তাঁকে মা হিসেবে চিনতেই পারছিলেন না রাজেশ। তাঁর দাবি, মায়ের চেহারা ছিল ফরসা। ছবির মহিলার গায়ের রং কালচে, মুখ রোদেপোড়া।

অন্য দিকে, রাতিয়ারও দৃষ্টি আর শ্রবণশক্তি বয়সের ভারে কমে এসেছে। ছেলের ছবি দেখে তিনিও কিছু বলতে পারছিলেন না। পরিচয়ের সেতু ভেঙে যাচ্ছিল বার বার ।

এরপরে আব্দুল গনি স্থানীয় সমাজসেবী সংগঠনের সহায়তায় রাতিয়াকে নিয়ে যান একটি পার্লারে। বৃদ্ধার পরিচর্যা করে ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও রোদেপোড়া দাগ সরানো হয়। নতুন ছবি পাঠানো হয় রাজেশের কাছে। সেই ছবি দেখেই রাজেশ চিনতে পারেন তাঁর মাকে।

কান্না ভেজা গলায় রাজেশ বলেন, ‘‘ভাবতাম, মা গঙ্গাসাগরেই দেহ রেখেছেন। অনেক খুঁজেছি, থানায় ডায়েরি করেছি। আজ ঈশ্বরই তাঁকে ফেরালেন।”

এখন রাতিয়ার দেশে ফেরার অপেক্ষা। বাংলাদেশ হাই কমিশন, সুন্দরবন পুলিশ জেলা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রশাসনের কাছে রেডিয়ো ক্লাব ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তিনি ফিরবেন পরিজনদের কাছে।

অম্বরীশ বলেন, “বৃদ্ধাকে প্রথমে চিনতে পারেনি পরিবার। আমাদের বাংলাদেশি সহযোগীরা দ্রুত রূপচর্চার ব্যবস্থা করে। তাই এত দিন পরে হলেও ওঁর পরিজনদের খুঁজে পাওয়া গেল।”

আব্দুল গনি ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘‘২০ বছর পরে কারও বাড়ি খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। কিন্তু ওঁকে দেখে মনে হয়েছিল, খুঁজতেই হবে। আমি খুব খুশি, ওঁর পরিবারের খোঁজ মিলেছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Canning

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy