চাষ হবে, কিন্তু লাগবে না জমি। জলের উপরে ভেসে থাকা মাচায় হবে আনাজ। এমন ভাসমান চাষেই দিশা খুঁজে পেয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ সুন্দরবনের গোসাবার চাষিরা।
প্রায় প্রতি বছরই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। অনেক সময়ই নদী বাঁধ ভেঙে নোনা জলে প্লাবিত হয় গ্রাম। চাষের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জমির নোনা ভাব কাটিয়ে নতুন করে ফসল ফলাতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যায়। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই উদ্যোগী হয়েছে গোসাবা ব্লকের আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েত। একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ওই পঞ্চায়েতের বেশ খানিকটা এলাকায় শুরু হয়েছে ভাসমান চাষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার খালগুলির কিছুটা অংশে ভাসমান পদ্ধতিতে নানা ধরনের মরসুমি আনাজ চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। তাঁরা জানান, প্রায় তিন বছর আগে ওই চাষ শুরু হয়েছিল। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ শুরু হলেও ওই পদ্ধতিতে চাষ অনেক চাষির পছন্দ হয়। তাই তাঁরা নিজেরাও ওই বেসরকারি সংস্থা ও আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে নিজেদের জলাশয়ে ওই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন। স্থানীয় চাষি নির্মল ভক্ত, সুধীর মণ্ডলরা বলেন, “প্রথমে সাহস পাইনি, আদৌ ফসল ফলবে কি না সন্দেহ ছিল মনে। কিন্তু দেখলাম ওই পদ্ধতিতে চাষও খুবই সহজ। ঝামেলা অনেক কম। তাই গত বছর থেকে চাষ শুরু করেছি। বাড়ির পুকুরেই এই চাষ করছি।”
মূলত প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে জলের উপর মাচা তৈরি করে চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে চাষে ফলনও বেশ ভাল বলে দাবি চাষিদের। আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জন মণ্ডল বলেন, “সুন্দরবন কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এখানে চাষবাস ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে অনেক সময় সেই চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই চাষিদের বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের খোঁজ দিতে এই ভাসমান চাষ শুরু করা হয় পরীক্ষামূলক ভাবে। এখন অনেকেই এই চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।”
উদ্যোক্তাদের দাবি, যাঁদের চাষের জমি নেই, কিন্তু বাড়িতে পুকুর রয়েছে তাঁরা এই চাষে যথেষ্ট উৎসাহ দেখিয়েছেন। নিজের বাড়ির পুকুরে মাছ চাষের সঙ্গেই আনাজ চাষ শুরু করেছেন অনেকেই। উদ্যোক্তাদের অন্যতম নিরুপম সামন্ত বলেন, “নোনা জমির কারণে যারা চাষ করতে পারেন না, তাঁদেরকে বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের খোঁজ দিতেই এই ভাসমান চাষে উৎসাহ দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এখন অনেকেই দেখছি নিজেদের পুকুরেও এই পদ্ধতিতে চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)