সাতসকালে গ্রামের কালীমন্দিরে গিয়ে চমকে উঠেছিলেন স্থানীয় এক যুবক। মন্দিরের চাতালে গুটিগুটি ঘুরে বেড়াচ্ছে কালো রঙের একটি কচ্ছপ! একে কালী মন্দির, তার পরে আবার কালো কচ্ছপ—খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। তার পর থেকেই গ্রামজুড়ে শুরু হয়েছে ‘কূর্মাবতার’-এর পুজো!
কচ্ছপটিকে গামলায় বসিয়ে সিঁদুর লেপে পুজো করছেন মহিলারা। কেউ বা আবার হাজির হচ্ছেন ‘দেবতাকে’ কচি কলমি শাক খাওয়াবেন বলে, কারও আবার সাধ হয়েছে দুধ খাওয়াবেন ‘কালীকচ্ছপ’-কে। ঠাকুর প্রণামি সেরে টুপটাপ খুচরো পয়সাও পড়ছে গামলার ভিতরে। ঠাকুর পাহারা দিতে রাত জাগছেন মন্দির কমিটির লোকেরা। এ গ্রাম-ও গ্রাম থেকে লোকে ভিড় করে দেখতে আসছেন নতুন ‘দেবতা’-কে। এই নয়া অবতারের বয়স কত, তা নিয়েও পথেঘাটে, মন্দিরের চাতালে তরজা চলছে।
কচ্ছপটির ছবি দেখে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন, কালো রঙের কচ্ছপটিকে ‘স্টার টরটয়েজ’ প্রজাতির। সেটি প্রাপ্ত বয়স্ক। রাজ্য জ্যু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদবের মতে, এই কচ্ছপটি ‘গ্যাঞ্জেটিক সফটশেল টার্টল’। বন দফতরের কর্তাদের অনেকেই বলছেন, ‘স্টার টরটয়েজ’ এবং ‘গ্যা়ঞ্জেটিক সফটশেল টার্টল’—এই দুই প্রজাতির কচ্ছপই সংরক্ষণের নিরিখে ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত। এগুলিকে ধরা বা আটকে রাখা আইনত দণ্ডনীয়।
বন দফতরের কর্তারা বলছেন, এই ধরনের কচ্ছপ ধরা পড়ার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা উদ্ধার করা উচিত। এমনকী প্রয়োজনে ওই কচ্ছপকে যাঁরা আটকে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। উত্তর ২৪ পরগনা বন দফতরের কোনও অফিসার এখনও কচ্ছপটিকে উদ্ধার করতে যাননি। জেলা বন দফতরের অফিসার সুবীর ঘোষ বলছেন, ‘‘আমরাও চাই কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে যথাস্থানে রাখতে।’’
ইতিমধ্যে বন দফতরের একটি দল কচ্ছপটিকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের কয়েক জন তাদের হটিয়ে দেয়। তপন ঘোষ নামে বাগুণ্ডী গ্রামের বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘মন্দিরে যখন উঠেছে তখন এই কচ্ছপ মন্দিরেই থাকবে। কাউকে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।’’
কচ্ছপ নিয়ে সমাজে অবশ্য নানা ছুৎমার্গ রয়েছে। অনেকেই বলে করেন, কচ্ছপ নাকি অপয়া। আবার হিন্দু ধর্মে কচ্ছপ বিষ্ণুর অবতারও (কূর্ম)। কোচবিহারের বাণেশ্বর মন্দিরের পুকুরেও কচ্ছপ রয়েছে। সেই মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ সেই কাছিম বাহিনীই। বাগুণ্ডীর বাসিন্দারাও বলছেন, দেবতাই নাকি কচ্ছপের রূপ ধরে হাজির হয়েছেন সেখানে! বাগুণ্ডীর এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ওই কচ্ছপের পিঠের খোলা কষ্টিপাথরের মতো কালো! পিঠেও মানুষের মুখের আদলে দাগ কাটা!’’ কী ভাবে ওই কচ্ছপ মন্দিরে উঠে এল, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।
বন দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘গ্যাঞ্জেটিক সফটশেল টার্টল’ হলে আশপাশের নদী থেকে তা চলে আসতে পারে। ‘স্টার টরটয়েজ’ সাধারণত এ রাজ্যে দেখা যায় না। তবে চোরাকারবারিরা বিক্রি করার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এই কচ্ছপ আমদানি করে থাকে।
ফলে এই কচ্ছপ উদ্ধার করলে তেমন কোনও চক্রের খোঁজও মিলতে পারে বলে মনে করছেন বন দফতরের অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy