আর্বজনা: রত্নেশ্বর ঘাট রোডে পড়ে আছে প্লাস্টিক। —নিজস্ব চিত্র।
ভরা বর্ষা। রাস্তায় জল থই থই। গঙ্গা পাড়ের শিল্পাঞ্চলে ফি বর্ষায় জল জমাটা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। যেমন বর্ষা এলেই সব টেন্ডার পাশ হয়ে রাস্তা সারানোর ধুম পড়ে, তেমনি জলমগ্ন রাস্তায় নোংরা গায়ে মেখে ঘরে ফেরাটাও প্রাত্যহিক চিত্র।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এই ‘জলছবি’ প্রায় সব ক’টি পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকায়। কোথাও একটু বেশি কোথাও কম। এর এক এবং একমাত্র কারণ যে নিকাশি সমস্যা, তা মানছেন পুর প্রতিনিধিরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের দায়ও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। প্লাস্টিক বিরোধী বহু প্রচার সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের অভ্যাস কিছুতেই বদলানো যাচ্ছে না। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষাও বলছে, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বহু পুরসভাই ‘নির্মল’ তকমা পেলেও বাসিন্দারা এখনও বেলাগাম প্লাস্টিক ব্যবহার করে চলেছেন। বিশেষত ঘিঞ্জি এলাকায় থাকা আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে নর্দমা বা রাস্তার ধারে প্লাস্টিকে মুড়ে ঘরের যাবতীয় আবর্জনা ছুড়ে ফেলার মানসিকতা বদল করা যাচ্ছে না।
বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, পুরসভা নিয়মিত ময়লা পরিষ্কারের গাড়ি পাঠায় না। ছোট ফ্ল্যাট বাড়িতে আবর্জনা জমিয়েও রাখা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় ফেলতে হয়।
অন্য দিকে, পুরসভাগুলির সাফাই কর্মীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আবাসনগুলির বাসিন্দারা আবর্জনা নেওয়ার গাড়ির বাঁশি শুনেও কর্ণপাত করেন না। এই বিতর্কের মাঝে প্লাস্টিক জমে জমে নালায় আর জল সরে না।
গত কয়েক বছরে তৃণমূল জমানায় শিল্পাঞ্চলের পথঘাটের হাল অনেকটাই ফিরেছে। বহু কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। ইটের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় অ্যাসফল্ট পড়েছে। সংস্কারের ফলে রাস্তা উঁচুও হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। তবু অল্প বৃষ্টিতেই পথঘাট ডুবছে।
শিল্পাঞ্চলের সদর শহর ব্যারাকপুর পার করেই ঘিঞ্জি এলাকা গারুলিয়া। জনসংখ্যা ৮৭ হাজারের কাছাকাছি। ২০টি ওয়ার্ডের এই পুরসভায় কয়েকশ নিকাশি নালা। পুরসভার সাফাই কর্মীরা নিয়মিত এই নালা সাফাই করলেও নর্দমায় জমে থাকা আবর্জনা আর প্লাস্টিক জমে জমে মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নালাগুলির। কাঙালি ঘাট রোড, অগ রোড, কেএন চ্যাটার্জি স্ট্রিট, রত্নেশ্বর ঘাট রোড, অঞ্জনগড়ের রাস্তা— সর্বত্র এক চিত্র। শীতলাপাড়া, বিবেকানন্দগড়, চন্ডীবাড়িও জলময়। আর তার মধ্যে ভাসছে ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে মাছের আঁশ, আনাজের খোসা মোড়ানো পাতলা প্লাস্টিক। একটানা বৃষ্টিতে ঘোষপাড়া রোডও কাদা প্যাচপ্যাচে। রাস্তার ধারের জমা ময়লা বৃষ্টিতে রাস্তার মধ্যে এসে পড়ছে। কখনও গাড়ির চাকায় লেপ্টে রাস্তাময় ছড়াচ্ছে ওই নোংরা, আবার কখনও ময়লা প্লাস্টিকে স্কুটির চাকা পিছলে পড়ছেন তরুণ-তরুণী।
প্লাস্টিক ঠেকাতে পুরসভা বছরভর নানা রকম প্রচার ও অভিযান চালিয়েও আয়ত্তে আনতে পারেনি। এ দিকে রাস্তায় জমে থাকা জলে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাও। যে রাস্তাগুলি সংস্কার বাকি, সেখানকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পুরসভার বিরুদ্ধেই।
গারুলিয়ার পুরপ্রধান সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘কী করব, মানুষ যদি বুঝেও না বোঝেন? প্লাস্টিক নিয়ে কতবার করে সচেতন করছি, কেউ শুনছেন আবার অনেকে কথা কানেই তুলছেন না। কিন্তু মানুষের এই স্বভাব ক্ষতি করছে গোটা এলাকার।’’ তিনি জানান, বর্ষায় রাস্তা সারালে আবার তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বর্ষা থামলেই সংস্কারের কাজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy