Advertisement
E-Paper

সোনার দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু বৃদ্ধের

আচমকাই বিকট শব্দ। কিছু বুঝতে না পেরে সকলেই ছুটে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। দেখলেন, বন্ধ সোনার দোকানের শাটার উপড়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। আর তারও কিছুটা দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছেন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধ। আর দোকানের ভিতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
আমির আলি মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

আমির আলি মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

আচমকাই বিকট শব্দ। কিছু বুঝতে না পেরে সকলেই ছুটে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। দেখলেন, বন্ধ সোনার দোকানের শাটার উপড়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। আর তারও কিছুটা দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছেন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধ। আর দোকানের ভিতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ এমনই এক বিস্ফোরণে চাঞ্চল্য ছড়ায় খড়দহের বন্দিপুরে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দোকানের ভিতরে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। তা থেকেই এই দুর্ঘটনা। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় আমির আলি মণ্ডল নামে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্থানীয় মসজিদের প্রাক্তন ইমাম। কী কারণে সোনার দোকানে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল এবং কী ভাবে তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটল— তা খতিয়ে দেখতে দোকানমালিক কৃষ্ণ রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে দোকানে রাখা সিলিন্ডারটি থেকে বহুক্ষণ ধরেই গ্যাস লিক করছিল। আর তা থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ সোনা গলানোর কাজে অন্য ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার কথা। ফলে এ ক্ষেত্রে রান্নার গ্যাস দিয়েই বেআইনি ভাবে ওই কাজ করা হচ্ছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কৃষ্ণবাবুর সোনার দোকানটি বন্দিপুর পঞ্চায়েতের মোড়লপাড়ায়। দোকানের উপরতলায় গয়না তৈরির কারিগরদের থাকার জায়গা। পুলিশ জানায়, রোজকার মতো এ দিনও দুপুরে দোকান বন্ধই ছিল। তখন কারিগরেরাও কেউ ছিলেন না। আর ওই দোকানের উল্টো দিকেই থাকেন আমির আলি মণ্ডল। প্রতিদিনই দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ওই বন্ধ দোকানের সামনে বসে রোদ পোহান তিনি। এ দিনও তা-ই করছিলেন।

খড়দহের সেই দোকান।

স্থানীয়েরা জানান, আচমকা বিকট শব্দে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুশো মিটার দূরের ক্লাবে থাকা যুবকেরাও ছুটে আসেন। ওই সোনার দোকানের সামনে পৌঁছে দেখা যায়, শাটার উপড়ে বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে গিয়েছে। আর রক্তে মাখামাখি হয়ে আমির আলি মণ্ডল প্রায় ১০ ফুট দূরে পড়ে রয়েছেন। খড়দহ বলরাম সেবা মন্দির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা ওই বৃদ্ধকে মৃত ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে দোকানের আগুন নেভায়।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের চার দিকে জটলা করে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোকানের ভিতরের দিকে কোল্যাপ্‌সিবল গেট অক্ষত থাকলেও বাইরের দেওয়াল ফেটে গিয়েছে। আর সেখান থেকেই শাটার উপড়ে ছিটকে গিয়েছে বাইরে। পুলিশ ও দমকলকর্মীদের অনুমান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে শাটারটি ওই বৃদ্ধকে সুদ্ধ ছিটকে দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে। আবার দোকানের ভিতরে চারপাশের দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। গুঁড়িয়ে গিয়েছে শোকেসের কাচ। এমনকী বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডেরও অর্ধেক ভেঙে উড়ে গিয়েছে। আশরাফুদ্দিন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন ‘‘বিকট আওয়াজে ভয় পেয়ে যাই। বাইরে এসে দেখি এই কাণ্ড। সোনার দোকানের ভিতরে কী ছিল যে, এত বড় বিস্ফোরণ ঘটল?’’ ঘটনার অভিঘাতে স্থানীয় এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেও বলরাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (জোন ২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘সোনার দোকানে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার কেন রাখা ছিল, তা জানতে মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডাকা হচ্ছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও।’’

Gas Cylinder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy