Advertisement
E-Paper

ঘুড়ি-মাঞ্জা থেকে দূরে আজকের ছেলেবেলা

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই তা হলে আগে আকাশে ঘুড়ির যে বিপুল আনাগোনা দেখা যেত, সে দিন কি গেল?

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৩
বিরল: ক্রমশ কমছে ঘুড়ি হাতে দাপাদাপি। নিজস্ব চিত্র

বিরল: ক্রমশ কমছে ঘুড়ি হাতে দাপাদাপি। নিজস্ব চিত্র

‘আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা’— মাত্র দু’দশক আগের এক গানের কলি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছে। এখন বরং ঘুড়িতেই অবজ্ঞা। ‘ঝাঁক’ তো দূরের কথা, ইদানীংকালের বিকেলের আকাশে ক’টা ঘুড়ি উড়ছে তা আঙুল গুনে বলে দেওয়া যায়। আগে অন্তত বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেও একটি-আধটু ঘুড়ি উড়ত। এ বার তা-ও দেখা গেল না।

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই তা হলে আগে আকাশে ঘুড়ির যে বিপুল আনাগোনা দেখা যেত, সে দিন কি গেল? কোথায় সেই মাঞ্জা দেওয়ার ব্যস্ততা! কাচ গুঁড়িয়ে, গদের আঠা বা ভাতের ফ্যান দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যে একটা নির্মল আনন্দ পেত বাচ্চারা। এখন আর এ সব কিছুই দেখা যায় না। অথচ একটা সময় ছিল বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল হলেই ছোটদের সঙ্গে বড়রাও সামিল হতেন ঘুড়ি ওড়ানোয়। ‘ভো কাট্টা’ চিৎকারে মুখর থাকত পাড়া। বাড়ির ছাদ, মাঠ, রাস্তার ধারের উঁচু ঢিপি থেকে হইহই করে ঘুড়ি ওড়াত ছেলে-বুড়ো। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিতে এক সময়ে বসিরহাটের শহর-গ্রামে রমরম করে চলত ঘুড়ি কাটার প্রতিযোগিতাও।

এখন যুগ পাল্টেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ। বুধবার বসিরহাট শহরের আকাশে দু’চারটের বেশি ঘুড়ি উড়তে না দেখে বছর পঞ্চাশের রতন খাঁড়া, সঞ্জয় মণ্ডলেরা বললেন, ‘‘আগে এই দিনটি ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবে পরিণত হত। ছোট-বড় সকলে আনন্দে মেতে থাকতাম। এখন আর আকাশ ঘুড়ির ঝাঁকে ভরে ওঠে না দেখে মন খারাপ হয়।’’ ঘুড়িপ্রেমীদের কথায়, ‘‘এখন পাড়ায়-পাড়ায় রাস্তার পাশে লাটাই, সুতো, ঘুড়ির দোকানও বড় একটা দেখা যায় না। আর মুখপোড়া, ময়ূরপঙ্খী, পেটকাটি, মোমবাতি, চাঁদিয়ালের দেখা মেলাও ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা আরও জানান, আগে কাগজের ঘুড়ি মিলত, এখন অধিকাংশ ঘুড়িই প্লাস্টিকের। তা ছাড়া, ঘুড়িতে এখন জননেতা থেকে শুরু করে নায়ক-নায়িকাদের ছবি দেওয়া থাকে। আগেকার দিনের ঘুড়ির সেই মেজাজটাই আর নেই।

বসিরহাট ঘুরে দেখা গেল, আগে যে সব দোকানে লাটাই-ঘুড়ি মিলত সেখানে এখন অন্য পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানি। তারই মধ্যে টিমটিম করে আলো-জ্বলা একটি দোকানে কয়েকটি ঘুড়ি-লাটাই বেচতে দেখা গেল এক জনকে। কেমন কেনাবেচা চলছে? দোকানি ব্রহ্ম সরকার বলেন, ‘‘খুব খারাপ। এখনকার ছেলেরা ফেসবুক নিয়ে পড়ে আছে। ঘুড়ি ওড়াতে ভালবাসে না। তা ছাড়া, ঘুড়ির দামও বেড়েছে। ৫-৭ টাকা দাম দিয়ে ঘুড়ি কিনে টাকা নষ্ট করতে চাইছে না কেউ।’’ আর এক ঘুড়ি-বিক্রেতা বিষ্টু মণ্ডল জানান, আজকাল খোলা জায়গার অভাব। তা ছাড়া, অঘটনের আশঙ্কায় সন্তানদের আর ঘুড়ির পিছনে ছুটতে দেন না তাদের পরিবারের লোকজন। তাই ঘুড়ির চাহিদা অনেকটাই কমেছে।’’

ফলে ঘুড়ি শুধু নিয়মমাফিক ওই বিশ্বকর্মার হাতেই লটকে থাকছে, আকাশে আর তাকে দেখা যাচ্ছে না।

Vishwakarma Puja Kites Smartphones
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy