Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রন্থাগারিকের অবসরের পর বন্ধ সরকারি গ্রন্থাগার

গোটা গ্রামে একটি মাত্র গ্রন্থাগার। বিনোদন থেকে পঠন-পাঠন গ্রামবাসীদের কাছে ওই গ্রন্থাগারই সব। সরকারি গ্রন্থাগার হওয়ায় বইয়েরও ঘাটতি নেই সেখানে।

বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে কাজকর্ম। নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে কাজকর্ম। নিজস্ব চিত্র।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৬
Share: Save:

গোটা গ্রামে একটি মাত্র গ্রন্থাগার। বিনোদন থেকে পঠন-পাঠন গ্রামবাসীদের কাছে ওই গ্রন্থাগারই সব। সরকারি গ্রন্থাগার হওয়ায় বইয়েরও ঘাটতি নেই সেখানে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা চাকরির পরীক্ষার সহায়ক বই অফুরন্ত। সেই গ্রন্থাগারই এক বছর হতে চলল বন্ধ। গ্রন্থাগারিক অবসর নিয়েছেন। সহায়ক যিনি ছিলেন তিনিও। ফলে গ্রন্থাগারে তালা ঝুলছে। ভিতরে থাকা বইপত্রও পোকায় কাটছে।

ব্যারাকপুর ১ ব্লকের জেঠিয়া পঞ্চায়েতের মালঞ্চ গ্রাম। গোটা গ্রামে হাজার চারেক লোকের বাস। মূলত চাষ আবাদ পেশা হলেও এখন গ্রামের অনেকেই বাইরে চাকরি করতে যান। গ্রামের মধ্যেই রেল লাইন লাগোয়া মালঞ্চ হাইস্কুল। আর তার সামনেই এই সরকারি গ্রন্থাগার। কংক্রিটের একতলা বাড়ি। মাথার উপর সিমেন্টের ফলকে লেখা মালঞ্চ পাঠাগার। স্থাপিত, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ। ৬৯ বছরের পুরনো এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা হাজারের কিছু বেশি। সামনেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। গত বছরও পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের জন্য গ্রন্থাগার খোলা রাখার সময় বাড়ানো হয়েছিল বলে ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়। গ্রন্থাগারের মাসিক চাঁদা পাঁচ টাকা। সেই টাকায় মাঝে মধ্যেই সহায়ক বই কেনার আর্জি জানাত ছাত্রেরা। অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক স্বপনকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য গ্রন্থাগারটা গমগম করত। শিক্ষকেরাও আসতেন। নতুন লোক নিয়োগের কথা হলেও শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।’’

মালঞ্চর বাসিন্দা পঞ্চানন পালের দান করা দু’কাঠা জমিতে এই গ্রন্থাগারের শুরুটা ছিল টালির একচালা বাড়িতে। বই বলতে এলাকার লোকেদেরই বিয়ে ও অন্য অনুষ্ঠানে পাওয়া বইপত্র দিয়ে সাজানো একটি তাক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুদানে পাওয়া বইয়ের ভাণ্ডর যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারি নিয়ম মেনে বই কেনাও হয়েছে।

সরকার স্বীকৃত গ্রন্থাগার এই অঞ্চলে সাকুল্যে একটাই। সে কারণে গ্রামের বইপ্রেমী মানুষদের উৎসাহের অন্ত ছিল না। এই গ্রামেরই বাসিন্দা অতনু তরফদার বলেন, ‘‘স্থানীয় অমৃতলাল কর্মকার, গোষ্ঠবিহারী ঘোষ, প্রফুল্ল কর্মকারদের উদ্যোগেই এক সময় গ্রন্থাগারটি চালু হয়েছিল। পরেও গ্রামের অনেকেই উদ্যোগী হয়েছেন এটিতে নতুন বইপত্র আনার বিষয়ে।’’ পরবর্তী সময়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর গ্রন্থাগারে বইয়ের চাহিদা এমনিতেই বেড়েছে। মালঞ্চ হাইস্কুলের শিক্ষক পলাশ পাল বলেন, ‘‘আমরা সকলে এই গ্রন্থাগারের উপর খুব নির্ভরশীল ছিলাম। অধিকাংশই গরিব ছাত্র। বই কেনার সাধ্য নেই। গ্রন্থাগারটি এদের জন্য খুব জরুরি। বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’’

ব্যারাকপুরের মহকুমা প্রশাসনের কাছেও ইতিমধ্যেই আর্জি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারের বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলছি। গ্রন্থাগার এমনিতেই প্রয়োজন। কোনও ভাবেই এটি বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Library closed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE