Advertisement
E-Paper

Coronavirus in West Bengal: টিকার লাইনে ভোগান্তি, সমাধানসূত্র অধরাই

লাইন রাখার জন্য ভাড়া খাটার লোকও পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ০৭:২৭
অব্যবস্থা: টিকা নিতে মানুষের ভিড়। অশোকনগরের একটি কেন্দ্রে।

অব্যবস্থা: টিকা নিতে মানুষের ভিড়। অশোকনগরের একটি কেন্দ্রে। ফাইল চিত্র।

হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে কয়েকশো মিটার লম্বা লাইন। সেখানে রোদে পুড়ছেন মানুষ। কখনও বৃষ্টির জলে ভিজছেন।

রাত জেগে মশারি খাটিয়ে অনেকে শুয়ে আছেন হাসপাতাল চত্বরে। ভোরে উঠে ঘুমচোখে দাঁড়িয়ে পড়ছেন লাইনে। অনেকে আবার কয়েক ঘণ্টা পরে জানতে পারছেন, টিকা মিলবে না।

লাইন রাখার জন্য ভাড়া খাটার লোকও পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও।

হাসপাতাল থেকে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ১০০-২০০ লোককে অমুকদিন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে সেই নোটিস কবে দেওয়া হবে, তারও ঠিক নেই। ফলে নোটিসের অপেক্ষায় দিনের পর দিন হাসপাতালের চক্কর কাটতে হচ্ছে মানুষকে। আবার নোটিসে হয় তো জানানো হয়েছে ২০০ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। নির্ধারিত দিনে ভোর থাকতে হাজির ১০০০ মানুষ। প্রথম ১০০ জনের হিসেব কে রাখবে, তার ঠিক নেই। শুরু হচ্ছে হুড়োহুড়ি। মারামারি।

প্রথমে লাইন দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করে পরে আবার সেই টোকেন হাতে টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে সব মিলিয়ে বেরিযে যাচ্ছে ৮-১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি।

ভ্যাকসিন নিতে এসে হয়রানির এমন চিত্র উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গোলমালও ছড়াচ্ছে। কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হচ্ছে। কোথাও আবার হুডোহুড়ির মধ্যে পড়ে পদপিষ্ট হচ্ছেন মানুষ।

কী পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও ভাবনা দেখা যাচ্ছে না প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের। ফলে দিনের পর দিন কাজকর্ম শিকেয় তুলে, রোজগারপাতি বন্ধ রেখে রোদে-জলে ভিজে ভ্যাকসিন নিতে এসে হেনস্থা হচ্ছেন মানুষ। কর্তারা ঠান্ডাঘরে বসে এ সবের একটা হেস্তনেস্ত করুন— চাইছেন সকলেই। কিন্তু বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য কোনও সুষ্ঠু পথের সন্ধান দিতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালি, হাবড়া, গোপালনগর, আমডাঙা, হাড়োয়া— জেলার নানা প্রান্ত থেকে নানা অব্যবস্থার ছবি উঠে আসছে।

এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এক বিড়ম্বনা। সরকারি কো-উইন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করে নির্দিষ্ট দিনে ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে অনেকে জানতে পারছেন, সে দিন তাঁদের নাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আসেইনি। ভ্যাকসিন না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।

একে তো করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভ্যাকসিন নিতে মরিয়া তাঁরা। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিনের শংসাপত্র না পেলে অনেকের কাজেকর্মে যেতে সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিন কী ভাবে মিলবে, তা নিয়ে দিশেহারা মানুষজন। শহর অঞ্চলে তবু টাকা দিয়ে কিছু বেসরকারি জায়গায় ভ্যাকসিন মিলছে। কিন্তু জেলার বেশিরভাগ অঞ্চলে সে সুযোগ নেই। সরকারি ব্যবস্থার উপরে ভরসা করতে বাধ্য তাঁরা। কিন্তু সরকার সে ভরসার মর্যাদা রাখতে পারছে কই, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

বিরোধীরা আবার এর মধ্যে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন, অনেক জায়গায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠদের ভ্যাকসিন পেতে অসুবিধা হচ্ছে না। ভোগান্তি হচ্ছে শুধু সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে বিজেপি কিছু কিছু জায়গায় স্মারকলিপিও দিয়েছে। পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপোষণের অভিযোগ অবশ্য মানছে না তৃণমূল। কিন্তু কী ভাবে ভ্যাকসিন-প্রক্রিয়া সহজ ও মসৃণ করা যায়, তার দিশা দেখাতে পারছেন না তাঁরাও।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা তো বলেই ফেললেন, ‘‘পরিস্থতি যে দিকে গড়াচ্ছে, ভ্যাকসিনের লাইনে যে কোনও দিন বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যাবে!’’

জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘টিকাকরণ কেন্দ্রে মানুষকে ডেকে আনা হয়। যাঁদের ডাকা হবে, তাঁদেরই সে দিন টিকা দেওয়া হয়। বাকিদের বলে দেওয়া হয়, পরে দেওয়া হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে, পরে কবে টিকা দেওয়া হবে, তা আমরা বলতে পারি না। কারণ, টিকার জোগানের উপরে তা নির্ভর করে।’’ জেলাশাসক জানান, গোটা কাজে পুরসভা, পঞ্চায়েত, পুলিশকে সামিল করা হয়েছে।

জেলাশাসকের বক্তব্য অবশ্য বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিলছে না বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। আর সে কারণেই টিকার দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সামনে।

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা অতিরিক্ত দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরা যখন জানতে পারছেন, নির্দিষ্ট সংখ্যায় ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এবং তাঁরা সেই তালিকায় আসছেন না, তখন তাঁরা ফিরে গেলেই আর ঝামেলা থাকে না।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিন আসছে কম। সে কারণেই সমস্যা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন এলে সমস্যা থাকবে না।’’

COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy