Advertisement
E-Paper

বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনছেন প্রধান শিক্ষক

গাড়ি গিয়ে থামল কয়েক কিলোমিটার দূরে শেরপুর গ্রামে। গাড়ি থেকে নেমে প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এক পড়ুয়ার বাড়ির খোঁজে। পথচলতি মানুষ, গ্রামের মুদির দোকানে বসে থাকা লোকজনের থেকে জেনে নিলেন বাড়ির ঠিকানা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ১৩:৫৭
নজরদারি: স্কুলছুট ছাত্রদের খোঁজ করতে বেরিয়েছেন শিক্ষকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নজরদারি: স্কুলছুট ছাত্রদের খোঁজ করতে বেরিয়েছেন শিক্ষকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

দুপুরের কড়া রোদ ঠেলে স্কুলের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গোপালনগরের নহাটা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিলরঞ্জন তালুকদার। সঙ্গে সহশিক্ষক গোবিন্দচন্দ্র দালাল। গোবিন্দবাবুই গাড়ি চালাচ্ছেন। গাড়ির সামনে বাঁধা ব্যানার। তাতে লেখা, ‘‘নহাটা হাইস্কুলে দীর্ঘ দিন ধরে অনুপস্থিত ও স্কুলছুটদের স্কুলে আনার অভিযান।’’ নিখিলবাবুর হাতে এক তাড়া কাগজ। তাতে লেখা, স্কুলছুট ও অনুপস্থিতদের তালিকা।

গাড়ি গিয়ে থামল কয়েক কিলোমিটার দূরে শেরপুর গ্রামে। গাড়ি থেকে নেমে প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এক পড়ুয়ার বাড়ির খোঁজে। পথচলতি মানুষ, গ্রামের মুদির দোকানে বসে থাকা লোকজনের থেকে জেনে নিলেন বাড়ির ঠিকানা। হাজির হলেন নবম শ্রেণির এক ছাত্রের বাড়ি।

দুপুরে প্রধান শিক্ষককে বাড়ির উঠোনে দেখে ছাত্রের পরিবারের চোখ ছানাবড়া। কেন স্কুলে যাচ্ছে না ছেলে, প্রশ্ন করলেন শিক্ষকেরা। প্রশ্ন এল, ক্লাসের পরীক্ষা কেন দেয়নি ছেলে?

আমতা আমতা করে ছেলেটি বলার চেষ্টা করেছিল, সাতটার মধ্যে চারটে পরীক্ষায় বসেছিল সে। প্রধান শিক্ষক জানিয়ে দিলেন, পর দিন থেকে যেন স্কুলে যায় ছেলেটি। এ দিকে, ছেলে যে স্কুলে যাচ্ছিল না, সে কথা জানতেনই না অভিভাবকেরা। তাঁরা সব শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। ছাত্রের মায়ের কথায়, ‘‘ছেলে তো রোজ ইউনিফর্ম পড়ে বাড়ি থেকে বেরোয়। আপনারা না এলে তো জানতেই পারতাম না স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে ও!’’

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিখিলবাবু এ ভাবে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে স্কুলছুট ও অনুপস্থিতদের খোঁজ করছেন। ইতিমধ্যেই রসুলপুর, ভাণ্ডারখোলা, ফুলবাড়ি, শেরপুর, কইখালি, শেহালাপাড়া, বাংলানির মতো বহু গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন।

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন স্কুলে না আসার পরে ছাত্রেরা পড়া ছেড়ে অভাবের সংসারে কাজেকর্মে লেগে পড়ে। স্কুলের হাজিরা খাতা দেখে এবং ক্লাসের পরীক্ষা যারা দেয়নি, এমন ছাত্রদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই মতো তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের সমস্যার কথা শোনা হচ্ছে।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা দেয়নি বা দীর্ঘদিন স্কুলে অনুপস্থিত ছাত্রের সংখ্যা ছিল জনা পঞ্চাশ। তাদের বেশিরভাগকেই ফের স্কুলমুখো করা গিয়েছে।

নিখিলবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, একটি ছেলেও যেন স্কুল ছেড়ে না যায়।’’

জেলা অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক অনিন্দ্যকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজটি ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার।’’

বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। সরকারি স্তরেও স্কুলছুটদের ফেরাতে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।

Head Master students School গোপালনগর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy