সুনসান: বৃষ্টিভেজা পথে দেখা নেই দর্শনার্থীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
রাত সাড়ে ১১টা। শুক্রবার দিনভর কখনও ভারী, কখনও অতিভারী বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ। বাগদা থানা এলাকার হেলেঞ্চা ও বাগদা বাজার এলাকা জনমানবহীন। পুজোর আনন্দ তো দূর, ব্যবসাপত্রও মাটি।
বনগাঁ-বাগদা সড়কে তৈরি হওয়া আলোর তোরণগুলি তখন একলা দাঁড়িয়ে ভিজে চুপসে গিয়েছে। এ দিক ও দিকে জলে লেপ্টে যাওয়া ব্যানার, আধভাঙা হোর্ডিং। মণ্ডপে প্রতিমার সামনে একা জেগে বসে ঢুলছে ঢাকি। দর্শনার্থীর দেখা নেই। উদ্যোক্তারাও যে যার বাড়ি ফিরেছিলেন একরাশ মন খারাপ নিয়ে।
বাগদায় মূল উৎসব কালীপুজো। সারা বছর ধরে মানুষ এই দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু এ বার উৎসবের মুল সুরটা বৃষ্টির জেরে দানাই বাঁধতে পারল না।
হেলেঞ্চা বাজার এলাকায় মিঠুন মণ্ডল নামে এক যুবকের রেস্তোরাঁ। পুজোর কথা মাথায় রেখে অনেক টাকার মালপত্র কিনে ছিলেন। চাউমিন, আইসক্রিম, মোগলাই বানিয়ে বসেছিলেন সন্ধে থেকে। ক্রেতার দেখা মেলেনি। প্রচুর মালপত্র নষ্ট হয়েছে বলে জানালেন। হেলেঞ্চার ভজন মধু জানান, গত বছর কালীপুজোর পর দিন ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার ফাস্ট ফুড বিক্রি করেছিলেন। এ বার মাত্র কয়েক হাজার টাকার কেনাবেচা হয়েছে।
হেলেঞ্চা এলাকায় দেখা গেল, সড়কের দুপাশে প্রচুর দোকানপাট। পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দোকান মালিকেরা বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। স্থানীয় যোগেন্দ্র সঙ্ঘের মাঠে মেলা বসেছে। নগরদোল্লা চক্ররেল মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। কেউ তাতে চাপার লোক নেই। প্রতিটি পুজো মণ্ডপের সামনে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। শুক্রবার সব বন্ধ ছিল। শিল্পকে ১০ হাজার অগ্রিম দিয়েও অনুষ্ঠান করতে পারেনি বাগদা পল্লি উন্নয়ন তরুণ সঙ্ঘের কর্মকর্তারা। সঙ্ঘের পক্ষে পরিতোষ সাহা জানালেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এত আয়োজন। বৃষ্টি এ বার সব আনন্দ কেড়ে নিল।
ডায়মন্ড হারবারে ত্রিপলে ঢাকা ফাস্ট ফুডের স্টলে গালে হাত দিয়ে বসেছিলেন গোপাল সর্দার। বললেন, ‘‘বৃষ্টিতে আমার পথে বসার জোগাড় হল। প্রতি বছর পুজোর মরসুমে ধারদেনা করে প্রায় বিশ হাজার টাকার কাঁচা মাল তুলে বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে দোকান দিই। দুর্গাপুজো ভাল ব্যবসা হয়নি। আর কালীপুজোটা তো একেবারে পথে বসিয়ে ছাড়ল।’’
পুজো উদ্যোক্তাদেরও মাথায় হাত। ডায়মন্ড হারবারের মাধবপুর সূর্য তরুণ সঙ্ঘের কর্তারা জানালেন, বালি ফেলে মণ্ডপের সামনের রাস্তা ঠিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু পথে লোক কোথায়!
একই অবস্থা উস্তির ঘটকপুর হালদার পাড়া নেতাজি সঙ্ঘের মণ্ডপেও। ঝড়-বৃষ্টিতে মণ্ডপের খানিক অংশ উড়ে গিয়েছে তাঁদের। ভিতরে জমা জল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ক্লাবের সম্পাদক নিমাই হালদার বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসূচির পরিবর্তন করা হয়েছে। পুতুলনাচের শিল্পীরা ফিরে গিয়েছেন।’’
অভিযাত্রী সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপের যাতায়াতের রাস্তায় জল জমেছে। প্যান্ডেলের একাংশ ভেঙে পড়েছে। সরবেড়িয়া মহাশ্মশান কালীর পুজোকেও ভুগিয়েছে বৃষ্টি। প্রতি বছর পুজোয় ৫০-৬০ হাজার ভক্ত আসেন। এ বার সংখ্যাটা কমেছে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। মেলা উপলক্ষে শ’দুয়েক খাবারের দোকান বসে ছিল। সকলেরই ব্যবসা লোকসানের মুখে পড়েছে।
সঙ্কটে পড়েছেন মন্দিরবাজারের গাববেড়িয়া দক্ষিণপাড়া শ্যামা পুজোর উদ্যোক্তারা। মণ্ডপের জায়গায় জায়গায় বৃষ্টির জলে খুলে পড়ছে। মণ্ডপে যাতায়াতের রাস্তা জলে থইথই করচে। পুজো কমিটির সম্পাদক রজত মণ্ডল ও সভাপতি উত্তম বৈরাগীরা জানালেন, বৃষ্টির জন্য মণ্ডপের ভিতরে কোনও ভাবে সাজানো হলেও বাইরের অংশে ক্ষতি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy