Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জ্বরের প্রকোপ, চিকিৎসা অমিল স্থানীয় হাসপাতালে

গোবরডাঙার গৈপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিন মজুর প্রশান্ত ঘোষের বেশ কিছু দিন ধরে জ্বর। মঙ্গলবার এসেছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। জানলেন, কোনও চিকিৎসক নেই। বাধ্য হয়ে তাঁকে অন্যত্র গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখাতে হল।

সীমান্ত মৈত্র
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

গোবরডাঙার গৈপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিন মজুর প্রশান্ত ঘোষের বেশ কিছু দিন ধরে জ্বর। মঙ্গলবার এসেছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। জানলেন, কোনও চিকিৎসক নেই। বাধ্য হয়ে তাঁকে অন্যত্র গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখাতে হল।

এই সমস্যা শুধু প্রশান্তবাবুর নয়। এলাকার সমস্ত বাসিন্দাদের। এলাকায় চলছে এখন জ্বরের উপদ্রব। চিকিৎসকেরা ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে বলছেন। অথচ এলাকার হাসপাতালে কোনও কাজ হচ্ছে না। ফলে মানুষকে যেতে হচ্ছে হাবরা অথবা বারাসত হাসপাতালে। যাতায়াতের খরচ, ধকল কোনওটাই কম নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, এখন গড়ে ৫০ জন করে রোগী বহির্বিভাগে আসেন। বেশির ভাগই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বর্হিবিভাগে হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক রোগী দেখেন। দুপুর ২টো পর্যন্ত ওই বিভাগ খোলা থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই চিকিৎসককে মাঝে মধ্যে পাওয়া যায় না। টাকা খরচ করে হাসপাতালে রোগী নিয়ে গিয়েও ফিরিয়ে আনতে হয়।

বুধবার এক প্রৌঢ়াকে নিয়ে এসেছিলেন বেলিনি এলাকার বাসিন্দা তাপসী সরকার। সোমবার থেকে জ্বর, গায়ে ব্যথা। ভ্যান ভাড়া করে তাপসীদেবী তাঁকে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ফের বুধবার আসতে হয়। দেখানোর পরে বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন কিনে আনতে হল। হাসপাতালে তা-ও নেই। প্রৌঢ়াকে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন ওই ডাক্তার। তাপসীদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালের হাল খুবই খারাপ। সামান্য জ্বরেরও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। বড় কিছু হলে তো আর কথাই নেই।’’

গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোবরডাঙার স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আমরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। রাস্তাতেই রোগী মারা যেতে পারে।’’

গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত ছুটিতে। পুরসভার তরফে শঙ্কর দত্ত (কাউন্সিলর) বলেন, ‘‘আমরা স্বাস্থ্য দফতর-সহ বিভিন্ন মহলে বহুবার জানিয়েছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে তাঁরা পদক্ষেপ করবেন।’’

এখানকার মানুষের রোগ হলে যেতে হচ্ছে ১২ কিলোমিটার দূরের হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বা ৪০ কিলোমিটার দূরে বারাসত জেলা হাসপাতালে। সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়াও গুণতে হচ্ছে ৪০০-৭০০ টাকা। যা অনেকের পক্ষেই দেওয়া মুশকিল।

এক সময়ে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটি ছিল শহর ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের পরিষেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসার জায়গা। চোখ, দাঁত, প্রসূতি, কান-সহ বেশ কিছু রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকতেন। ছিল অপারেশন থিয়েটার। ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা মিলত। রোগী ভর্তিও হতো। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে হাসপাতালের অন্তঃর্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালটি জেলা পরিষদ পরিচালিত। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও হাসপাতালটি চালানোর মতো পরিকাঠামো নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতর যাতে হাসপাতালটি নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেয়, সে জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এখন ভবনগুলিতে শ্যাওলা জমে গিয়েছে। জানাল ভেঙে গিয়েছে। ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়ছে। আগাছায় চারিদিক ভরা। আর্সেনিক-মুক্ত পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও বহু দিন খারাপ। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে একজন চিকিৎসকই বসেন। এলাকার মানুষ হাসপাতালের পরিকাঠামো ফেরানোর জন্য বহু আন্দোলন করেছেন। বিক্ষোভ, পথ অবরোধ, অনশন, স্মারকলিপি দেওয়া কিছুই বাদ যায়নি। কয়েক বছর আগে রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য গোবরডাঙায় এসে ঘোষণা করেছিলেন, হাসপাতালটির ভার নেবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশ গোবরডাঙাবাসী।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানান, ওই হাসপাতালটি স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High fever negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE