Advertisement
E-Paper

ইতিহাসের শিক্ষক নিচ্ছেন বিজ্ঞানের ক্লাস

ছাত্র বাড়ছে, কিন্তু নেই শিক্ষক। ২৮০ জন পড়ুয়াকে পড়াতে হিমসিম খেতে হচ্ছে সবেধন দুই শিক্ষককে। 

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৪
পড়াশোনা: সেই স্কুলে

পড়াশোনা: সেই স্কুলে

ছাত্র বাড়ছে, কিন্তু নেই শিক্ষক। ২৮০ জন পড়ুয়াকে পড়াতে হিমসিম খেতে হচ্ছে সবেধন দুই শিক্ষককে।

২০১০ থেকে মথুরাপুর ১ ব্লকের শঙ্করপুর পঞ্চায়েতের চৌধুরিচক জুনিয়র হাইস্কুল শুরু হয়। তখন থেকেই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একাধিকবার সব স্তরে জানানো হয়েছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জেলা স্কুল পরিদর্শক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি জেলায় নতুন এসেছি। এলাকার স্কুলে কী কী সমস্যা রয়েছে তা দেখা হচ্ছে। এই স্কুলগুলিতে অতিথি শিক্ষক পাঠালেও তাঁরা যেতে চান না। নতুন নিয়োগ হলে শিক্ষক দেওয়া হবে। তবে ওই স্কুলটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলের কাছাকাছি কোনও হাইস্কুলও নেই। ফলে চতুর্থ শ্রেণি পাস করার পরে ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন অভিভাবকেরা। তা ছাড়া, গ্রামীণ রাস্তারও কোনও উন্নয়ন হয়নি। কচিকাঁচাদের অত দূরে যাতায়াতেও অসুবিধা বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।

২০১০ সালে ওই জুনিয়র হাইস্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায়। প্রথম দিকে স্কুলটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে শুরু হয়েছিল। পরে ওই স্কুলের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়েছে। এলাকার মানুষ বেশির ভাগই চাষবাস করে সংসার চালান। কেউ দিনমজুরি করেন। তাঁদের পক্ষে দূরের কোনও স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়ানো সম্ভব নয়।

ওই স্কুলে পড়তে আসে চৌধুরীচক, ভগবানপুর, সারসবেড়িয়া, আমিরপুর ও পাঁচানি গ্রামের ছেলেমেয়েরা। সলিল হালদার, গোপাল মণ্ডলদের আক্ষেপ, ‘‘এত দিনেও সরকার স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে না পারায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা লাটে উঠেছে। কিন্তু কাছাকাছি কোনও মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে বাচ্চাদের।’’

এখন স্কুলে মাত্র দু’জন শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুহিন চৌধুরী ও সহকারী শিক্ষক সুজয় মিশ্র। তুহিন ইংরেজি ও সুজয় ইতিহাস-ভূগোল পড়ান। কিন্তু জীবন বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান ও গণিতের কোনও শিক্ষক নেই। ওই বিষয়গুলিও তাঁদেরকেই দেখতে হয়। কখনও যদি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক না থাকেন, তা হলে একজনকেই স্কুলের দায়িত্ব সামলে পড়ানোর কাজ করতে হয়।

স্কুলের পরিকাঠামোও দুর্বল। পুরনো ভবন। সেখানেই দু’টি ঘর সংস্কার করা হচ্ছে। তার মধ্যেই ক্লাস চলছে কোনও রকমে। একটি বেঞ্চে সাত জন ঠাসাঠাসি করে বসে। দু’টি শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহার করা যায় না। পানীয় জলের কোনও নলকূপ নেই। পাশের প্রাথমিক স্কুলের নলকূপ থেকে জল সংগ্রহ করতে হয়। স্কুলে কোনও পাঁচিল নেই। বহিরাগতেরা অনায়াসে ভিতরে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। মিড ডে মিল খাবার আলাদা ঘর নেই। খেলার মাঠ নেই।

এত সমস্যা থাকলেও শিক্ষকদের পড়ানোর মধ্যে কোনও খামতি নেই বলে অভিভাবকেরা জানালেন। তুহিনের বাড়ি হুগলির উত্তরপাড়ায়। সহকারী শিক্ষকের বাড়ি চন্দননগরে। তাঁদের যাতায়াতের সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টারও বেশি। শিক্ষকেরা জানালেন, তাঁরা না এলে পড়া হবে না, এই ভেবেই কষ্ট করে হলেও যাতায়াত করেন। তবে এ ভাবে ক্লাস সামাল দেওয়া কষ্টকর। একটি ক্লাসে পড়ালে অন্য ক্লাসের ছেলেমেয়েরা স্যারের অপেক্ষায় বসে থাকে। আরও কিছু শিক্ষকের প্রয়োজন। তুহিনের কথায়, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা আমাদের কিছুটা সাহায্য করেন। কিন্তু সব সময়ে তো তাঁদেরও বলা যায় না। তবে খুব অসুবিধা হলে গ্রামের যুবক নারায়ণচন্দ্র নস্কর ও পলাশ প্রামাণিক বিনা পারিশ্রমিকে ক্লাস নেন।’’

School Student Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy