বাড়ি ফেরার আগে ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে প্রমীলা। শুক্রবার, বারাসত হাসপাতালে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
চার ভাইয়ের একমাত্র বোন। সুস্থ-সবল তরুণী বিয়ের পর থেকেই আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকেন। মদ্যপ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরে আসেন বাপের বাড়ি। কিন্তু এক দিন সেখান থেকেও অভিমানে বাড়ি ছাড়েন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষমেশ একটি ট্রেনে চড়ে পৌঁছন বারাসতে। অসুস্থ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে রেল পুলিশ। চিকিৎসক ও কর্মীদের যত্নে তিন মাস সেখানে ভর্তি থাকার পরে শুক্রবার বাবা-মা-ভাইদের কাছে ফিরে গেলেন ওই তরুণী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানার মাধবপুরের বাসিন্দা দশরথ ও জয়া প্রামাণিকের একমাত্র মেয়ের নাম প্রমীলা ওরফে শচীরানি। বছর চারেক আগে বিয়ে হয় তাঁর। তার পর থেকেই আস্তে আস্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। অভিযোগ, নানা অজুহাতে শুরু হয় অত্যাচার। মারধর সহ্য করতে না পেরে সর্বাঙ্গে আঘাত নিয়ে এক দিন বাপের বাড়ি ফিরে আসেন প্রমীলা। তত দিনে তাঁর মানসিক সমস্যাও শুরু হয়েছে। দশরথই জানিয়েছেন, এক দিন মেজাজ হারিয়ে মেয়েকে বকাবকি করেন তিনি। মাস তিনেক আগের ঘটনা। তার পরেই অভিমানে বাড়ি ছাড়েন প্রমীলা।
নানা জায়গায় ঘোরার পরে বারাসত হাসপাতালে ঠাঁই হয় তাঁর। চিকিৎসার পাশাপাশি শুরু হয় কাউন্সেলিং। কিছু দিনের মধ্যেই সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন প্রমীলা। হাসপাতালের কর্মী-চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থ করে তুলতে উঠেপড়ে লাগেন। দিন কয়েক আগে সুপার সুব্রত মণ্ডলকে সব কথা খুলে বলেন প্রমীলা। বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধও জানান। তাঁর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই যোগাযোগ করেন কুলতলি থানার সঙ্গে।
পুলিশের কাছ থেকেই পরিবার জানতে পারে, বারাসত হাসপাতালে আছেন প্রমীলা। তার পরেই দশরথ ও প্রমীলার ভাইয়েরা সেখানে আসেন। এ বার হাসপাতালের সুপার ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা তাঁদের বোঝান। এ-ও বলেন, প্রমীলা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। নতুন জীবনে ফিরে কাজকর্ম করেও রোজগার করতে পারবেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান দশরথ, জয়া ও তাঁদের ছেলেরা। এসেছিলেন পাড়ার লোকজনও। হারানো মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে
মা-বাবা চিকিৎসক-কর্মীদের
ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সুপার সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার পরে সুস্থ হয় মেয়েটি। কিন্তু এ ভাবে বাড়িতে না ফেরাতে পারলে
কাজটা সম্পূর্ণ হত না। সেটাই হাসপাতালের তরফে করা হয়েছে।’’ আর এ দিন বাড়ি ফেরার সময়ে নার্সদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে প্রমীলা শুধু বলেছেন, ‘‘হাসপাতাল নয়, এটা আমার বা়ড়ি। মাঝেমাঝেই আসব, দেখা করতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy