Advertisement
E-Paper

অপহরণের নাটক ফেঁদে প্রেমিকের সঙ্গে দিঘায় বধূ

ফেসবুকে আলাপ হওয়া প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন তরুণী। ইচ্ছে ছিল, দিন কয়েক কাটিয়ে আবার বাড়ি ফিরবেন। ফিরলেনও। কিন্তু তার আগে গোটা ঘটনাকে ‘অপহরণ’ হিসাবে সাজাতে গিয়েই ফেঁসে গেলেন নিজে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৯

ফেসবুকে আলাপ হওয়া প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন তরুণী। ইচ্ছে ছিল, দিন কয়েক কাটিয়ে আবার বাড়ি ফিরবেন। ফিরলেনও। কিন্তু তার আগে গোটা ঘটনাকে ‘অপহরণ’ হিসাবে সাজাতে গিয়েই ফেঁসে গেলেন নিজে। প্রেমিকেরও একই অবস্থা।

ঘটনাটি হাসনাবাদের। সোমবার সন্ধ্যায় দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁদের বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। ষড়যন্ত্রে আর কেউ জড়িত কিনা, তা জানতে প্রেমিককে ৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তরুণীকে ৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে হাসনাবাদে এক চাকুরিজীবীকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন কলকাতার ওই তরুণী। তিনি পড়েন কলেজে। শনিবার টেস্ট পরীক্ষা দিতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তরুণী। তারপর থেকে খোঁজ মিলছিল না। সন্ধ্যায় তরুণী বধূর শ্বশুরমশাই হাসনাবাদ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

ওই রাতেই তরুণীর স্বামীর মোবাইলে ১০ লক্ষ টাকা ‘মুক্তিপণ’ চেয়ে ‘অপহরণকারী’র এসএমএস আসে। সে কথা জানানো হয় পুলিশকে। মুক্তিপণের টাকা ‌নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে আসতে বলা হয় এসএমএসে। টাকা না দিলে বা থানায় গেলে ফল ‘মারাত্মক’ হতে পারে বলে হুমকিও আসে। রবিবার ফের একই এসএমএস পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পরিবার।

পুলিশ জানায়, এরই মধ্যে ওই তরুণী শাশুড়িকে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করেন। বলেন, ‘‘তোমরা আমায় বাঁচাও।’’ আবার এটাও বলেন, ‘‘টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। যে ভাবেই হোক, তিনি দুষ্কৃতীদের ডেরা থেকে পালাবেন।’’

এ কথা বলার পরেই ফোন কেটে যায়। ওই রাতেই, ১০টা নাগাদ তরুণী স্বামীকে অজানা নম্বর থেকে ফোন করে বলেন, দুষ্কৃতীদের ডেরা থেকে পালিয়েছেন। ধর্মতলায় একজনের মোবাইল থেকে কথা বলছেন। তাঁকে এসে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন তিনি।

তবে তত দূর আর যেতে হয়নি। তরুণী বাস ধরে পৌঁছন উল্টোডাঙায়। সেখান থেকে এক জামাইবাবু তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

কিন্তু দুষ্কৃতীদের হাত থেকে এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে পালালেন তিনি, তা নিয়ে সংশয় ছিল তদন্তকারী অফিসারদের। সোমবার বসিরহাটের এসিজেএমের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পরে পুলিশি জেরার ভেঙে পড়েন তিনি। পুলিশের অনুমানই সত্যি প্রমাণ হয়। পুলিশের দাবি, তরুণী জানান, মাস কয়েক আগে ফেসবুকে তাঁর পরিচয় হয় পূর্ব মেদিনীপুরের এক তরুণের। প্রেম জমে ওঠে। তারা ঠিক করে, এক সঙ্গে কোথাও একটা যেতে হবে। ঠিক হয়, নিউ দিঘা যাবেন।

কিন্তু স্বেচ্ছাতেই যদি বাড়ি ছেড়ে থাকেন, তা হলে মুক্তিপণের প্রসঙ্গ এল কেন?

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ মনে করছে, প্রেমিকের সঙ্গে পাকাপাকি সংসার ছাড়ার ইচ্ছে ছিল না ওই বধূর। কয়েকটা দিন কাটিয়ে ফিরতেই চেয়েছিলেন। তাতে যাতে সংসারে অশান্তি না বাধে, প্রেমপর্ব চাপা থাকে, সে সব ভেবেই অপহরণের ছক কষা হয়।

সোমবার হাসনাবাদ থানায় বসে যখন তরুণী এই কথা বলছেন, ততক্ষণে অবশ্য তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কলকাতা থেকে ধরা হয়েছে তাঁর প্রেমিককে। পরে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

পুলিশের এক অফিসার জানান, শনিবার রাতে ধর্মতলা থেকে বাস ধরে দু’জনে যান নিউ দিঘার এক হোটেলে। সেখানে হঠাৎ তরুণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় পর দিন ফিরে আসেন কলকাতায়।

গোটা ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন হতবাক। স্বামী-শ্বশুরের বক্তব্য, ‘‘সোস্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তই এ জন্য দায়ী।’’ তরুণীর মা-ও ভেঙে পড়েছেন।

ওই তরুণের দাবি, ‘‘আমি ওকে ভালবাসি। তাই দূরে কোথাও চলে যাওয়া পরিকল্পনা ছিল।’’ আর কী বলছেন তরুণী? তিনি বলেন ‘‘কোথায় গিয়েছি, তা গোপন করতেই মুক্তিপণ চাওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে ও অসুস্থ হওয়ায় সব ভেস্তে গেল।’’

সব দেখেশুনে প্রবীণ এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘ধরে নিচ্ছি ভালবাসার জন্যই এমনটা করেছিল ওরা। কিন্তু সমাজ-সংসার সব তুচ্ছ করে বেরিয়ে যেতে হবে, এ কেমন ভালবাসা!’’

Housewife Boyfriend Escape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy