সাহসিনী: পান্না তরফদার
দুপুর ২টো। নিজের ঘরে বসেছিলেন বাগদা থানার ওসি। হঠাৎ তাঁর কানে আসে এক কিশোরীর গলার আওয়াজ। কাঁপা গলায় থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীকে সে বলছে, ‘‘স্যার, আমি বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। জোর করে আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’
কিশোরীকে নিজের ঘরে ডেকে নেন ওসি আশিস দুলুই। ঘটনা জানতে চাইলে, পান্না তরফদার নামে ওই কিশোরী বলে, ‘‘আমি পড়তে চাই। কিন্তু মা বাবা বিয়ে দিতে চাইছেন। পাকা কথাও হয়ে গিয়েছে। ২৪ শ্রাবণ বিয়ে ঠিক হয়েছে।’’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।
কিশোরীর কথা শুনে ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আশিসবাবু। পুলিশ পাঠান ওই পান্নার বাড়িতে। কিশোরীর বাড়ি বাগদা ব্লকের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম আউলডাঙাতে। ষোলো বছরের পান্না আউলডাঙা অমূল্যধন রায় উচ্চ বিদ্যালেয়র দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা উত্তম তরফদার কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকেন। অভাবের সংসারে মা রিনাদেবীর সঙ্গে থাকে ওই নাবালিকা।
এরপর রণঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জুশ্রী মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা পান্নার বাড়িতে যান। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, নাবালিকা বিয়ে আইনত অপরাধ। রিনাদেবীর দাবি, ‘‘অভাবের সংসার। তাই মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। জানতাম না এই বয়সে বিয়ে দেওয়া অপরাধ।’’ তবে বোঝানোর পর তিনি পুলিশকে মুচলেকা দেন এখন মেয়েকে পড়াবেন। বিয়ে দেবেন না।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ শ্রাবণ গাইঘাটার জলেশ্বর এলাকার এক যুবকের সঙ্গে পান্নার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ পরিবারটির উপর নজর রাখছে বলে জানা গিয়েছে।
পান্না জানায়, টিভিতে দেখেছি ও খবরের কাগজে পড়েছি থানায় গেলে বিয়ে বন্ধ হয়। তাই কোনও দিক না ভেবে রাজ্য সরকারের দেওয়া সাইকেল চালিয়েই থানায় চলে গিয়েছিল সে। তার কথায়, ‘‘পুলিশ কাকুদের জন্য ফের লেখাপড়া করতে পারবো এখন। এই ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’’ কিশোরীর পড়াশোনায় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও সাহায্য করা হবে বলে জানান মঞ্জুশ্রীদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy