Advertisement
E-Paper

মধ্যমগ্রাম ট্রলি-কাণ্ড: খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেলেন মা ও মেয়ে, সঙ্গে লক্ষ টাকা জরিমানা, তথ্যপ্রমাণ লোপাটে ৭ বছরের জেল

গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার কুমোরটুলি ঘাটে একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে সুমিতার টুকরো দেহ উদ্ধার হয়। ওই ট্রলি ব্যাগটি গঙ্গায় ফেলতে এসেছিলেন দুই মহিলা। তাঁদের নাম ফাল্গুনী ঘোষ এবং আরতি ঘোষ। তাঁরা সম্পর্কে মা এবং মেয়ে।

Madhyamgram Trolly Case

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রলির মধ্যে আরতি ঘোষ নামে এক বৃদ্ধার দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ট্রলিতে ভরে গঙ্গায় ফেলতে যান মা-মেয়ে। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৪
Share
Save

ট্রলিকাণ্ডে মা-মেয়েকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। মধ্যমগ্রামে সুমিতা ঘোষের খুনের মামলায় বারাসত আদালত ফাল্গুনী ঘোষ এবং তাঁর মা আরতি ঘোষের কারাবাসের পাশাপাশি এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশপাশিই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অপরাধে তাঁদের সাত বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে সাজা ঘোষণার পরে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আগে দু’জনকে সাত বছর কারাগারে কাটাতে হবে। তার পরে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শুরু হবে। অর্থাৎ, আজীবন এঁদের কারাগারেই থাকতে হবে।’’ অন্য দিকে, আসামিদের আইনজীবী তারকচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আমরা কলকাতা হাই কোর্টে যাব।’’

গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার কুমোরটুলি ঘাটে একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে সুমিতার টুকরো দেহ উদ্ধার হয়। ওই ট্রলি ব্যাগটি গঙ্গায় ফেলতে এসেছিলেন দুই মহিলা। তাঁদের নাম ফাল্গুনী ঘোষ এবং আরতি ঘোষ। সম্পর্কে তাঁরা মা এবং মেয়ে। তাঁদের হাতে থাকা ট্রলি ব্যাগ থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয়েরাই তালা ভেঙে ট্রলি ব্যাগ খুলে সুমিতার দেহ উদ্ধার করেন।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, ঘটনার শিকড় উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। সেখানকার দক্ষিণ বীরেশপল্লির বাসন্তী মন্দির এলাকায় ফাল্গুনীদের বাড়িতে থাকতে গিয়েছিলেন পিসিশাশুড়ি সুমিতা। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে সেখানেই সুমিতাকে খুন করা হয়। ফাল্গুনী এবং আরতিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঘটনার পুনর্নিমাণের পর আহিরীটোলা থেকে বৌবাজারের একটি সোনার দোকানে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেই দোকানেই সুমিতার গলার হার, কানের দুল, নাকছাবি ও বালা বিক্রি করেছিলেন ফাল্গুনীরা। মোট ৪২ হাজার টাকার গয়না বিক্রি করা হয়েছিল ওই দোকানে। শুধু তা-ই নয়, অন্য একটি দোকানে গিয়ে দু’লাখ ৫৩ হাজার টাকার নতুন গয়নার বরাতও দিয়েছিলেন আরতি এবং ফাল্গুনী। ওই দোকানে যে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন তাঁরা, সেই টাকাও সুমিতার মোবাইল থেকে অনলাইনে দেওয়া হয়েছিল বলেই জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, নিছক পারিবারিক গোলমাল নয়, খুনের নেপথ্যে আর্থিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এক নজরে মধ্যমগ্রাম খুনের মামলা

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫:

সুমিতাকে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল মধ্যমগ্রাম থানা এলাকার বীরেশপল্লির একটি ভাড়াবাড়ি। প্রথমে ইট দিয়ে প্রৌঢ়ার মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। তার পর বাড়িতে থাকা একটি ছোট ট্রলি ব্যাগের মধ্যে দেহ ঢোকানোর চেষ্টা হয়। ট্রলি ব্যাগের আকৃতি ছোট হওয়ার দেহকে ব্যাগের ভিতরে রেখে পা দুটোকে বাইরে বার করে ঘরের এক কোণে সারা রাত ফেলে রাখা হয়েছিল।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:

ঘরের ভিতর দেহ রাখা ছিল। অভিযুক্ত ফাল্গুনী এবং তাঁর মা আরতি ভাড়াবাড়ির দরজায় তালা দিয়ে কলকাতা রওনা দেন। কলকাতা থেকে নতুন একটি বড় আকারের নীল রঙের ট্রলি ব্যাগ কেনেন তাঁরা। মৃতা সুমিতার ‘ফোনপে’ অ্যাপ ব্যবহার করে কলকাতায় সোনার গয়নার অর্ডার দেন। পরে এটিএম থেকে নগদ টাকাও তোলেন। তার পর হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে সন্ধ্যায় মধ্যমগ্রাম ফিরে যান। সেখানকার একটি গয়নার দোকানে গিয়ে মৃতা সুমিতার শরীর থেকে খুলে নেওয়া সোনার গয়না পরিবর্তন করে নিজেদের জন্য বেশ কিছু নতুন সোনার গয়না এবং টাকা নেন মা-মেয়ে।

রাতে মা-মেয়ে সুমিতার দেহ নতুন ট্রলি ব্যাগে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ট্রলিতেও পা-সহ পুরো শরীরের জায়গা না হওয়ার অস্ত্র দিয়ে হাঁটুর কাছ থেকে পা কাটেন এবং নতুন ট্রলি ব্যাগের দেহের খণ্ডাংশ ভরেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫:

সকলা সাড়ে ৫টা নাগাদ রাস্তা থেকে একটি ভ্যানরিকশা ডেকে এনে চালকের সাহায্য নিয়ে নীল ট্রলি তোলা হয় তিন চাকার যানে। গন্তব্য, দোলতলা। সেখানে পৌঁছে একটি সাদা রঙের ক্যাবে ওঠেন মা-মেয়ে। গাড়ির ডিকিতে ট্রলি ব্যাগ ভরে কুমোরটুলি ঘাটের দিকে রওনা হন।

সকাল ৭টা নাগাদ কুমোরটুলি ঘাটে পৌঁছোনোর পর স্থানীয় কয়েক জন নীল ট্রলি-সহ দুই অভিযুক্তকে আটকান। ঘটনাস্থলে যায় উত্তর বন্দর থানার পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে উত্তর বন্দর থানায় খুনের মামলা রুজু হয়।

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫:

সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তভার নেয় মধ্যমগ্রাম থানা। তারা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ১০৩ (১), ২৩৮, ৩ (৫) ধারায় মামলা রুজু করে।

ঘটনাক্রমে মামলার তদন্তভার সিবিআইকে হস্তান্তর করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করে।

২০ মে, ২০২৫:

আরতি-ফাল্গুনীর বিরুদ্ধে বিএনএসের ১০৩ (১), ২৩৮, ৩ (৫) ধারায় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

৩০ অক্টোবর, ২০২৫:

উভয় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

Madhyamgram Murder Lifetime Sentence Crime Trolly Bag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy