দৈনিক করোনা সংক্রমণ দুশোর নীচে নেমেছে উত্তর ২৪ পরগনায়। তবু উদ্বেগের কারণ থেকেই যাচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও করোনায় মৃত্যুর ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। মঙ্গলবার পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর নিরিখে রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৫৬০ জন। গত এক সপ্তাহে (২৩-২৯ জুন) জেলায় করোনায় মারা গিয়েছেন ৫১ জন। ২৩ মে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪,২৪০ জন। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন ৪৭ জন। এই পরিসংখ্যানের নিরিখে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরও কম হওয়া উচিত ছিল।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, করোনার উপসর্গ ধরা পড়ার পরেই করোনা-পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকে। শারীরিক অবস্থার খুব অবনতি হলে হাসপাতালে তাঁরা যাচ্ছেন। ফলে অনেকেই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ, উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা-পরীক্ষা করাতে হবে।
জেলার সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে নিজেদের ইচ্ছা মতো ওষুধ খাচ্ছেন রোগীরা। তাতে কাজ হচ্ছে না দেখে অনেক পরে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। এই প্রবণতা শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, বৃষ্টিতে ভেজার ফলে বা ঠান্ডা জল খেয়ে জ্বর বা সর্দি কাশি হয়েছে। এই মনোভাবের ফলে বিপদ বাড়ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এখন যাঁরা করোনায় মারা যাচ্ছেন, তাঁরা অনেক আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সদ্য আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কার্যত হচ্ছে না বললেই চলে। মৃত্যুহার আরও কমবে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বয়স্ক এবং কো-মর্বিডিটি যুক্ত।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, ‘‘অনেকে ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কো-মর্বিডিটি যুক্ত করোনা-রোগীরা হাসপাতালে এসে অন্য রোগের কথা চিকিৎসকদের জানাচ্ছেন না। ফলে, বিপদের আশঙ্কা থাকছে।’’ তাই এই সব রোগীদের পুরনো রোগের প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ নিয়ে হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাতে চিকিৎসকদের সুবিধা হবে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘করোনা-পরীক্ষা করানোর প্রবণতা কমেছে।’’ এ দিকে, বনগাঁ, বসিরহাট, ব্যারাকপুর ও বারাসত মহকুমায় বাসিন্দাদের একাংশ করোনাবিধি মানছেন না। বাইরে বেরনোর সময় মাস্ক পরছেন না। হাটেবাজারে শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাই থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে বেচাকেনা করছেন। বিকেল হলেই চায়ের ঠেকে ও পাড়ায় মোড়ে যুবকেরা আড্ডা দিচ্ছেন মাস্ক না পরে। পাড়ায় ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক জমায়েতও হচ্ছে। এই সব দেখে আতঙ্কিত সচেতন মানুষ। তাঁদের দাবি, মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরনো লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করুক।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকা নেওয়া অনেকেও বাইরে বেরচ্ছেন মাস্ক না পরে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু প্রবীণও। এ প্রসঙ্গে বিএমওএইচ (বনগাঁ) মৃগাঙ্ক সাহারায় বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছেন, তাঁদের আর করোনা হবে না। মনে রাখা উচিত, টিকা নিলেও করোনা-সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নির্মূল হয় না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’’