Advertisement
১১ মে ২০২৪
TMC Internal Conflict

গোষ্ঠীকোন্দলই মাথাব্যথার কারণ শাসক দলের

২০১৬ সালের বিধাসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৩ শতাংশ। বামেদের ভোট ছিল ৩৬.০৫ শতাংশ। বিজেপির ভোট ছিল ৮.০১ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভায় বামেরা পেয়েছে মাত্র ৩.০৯ শতাংশ ভোট।

An image of TMC flags

গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে অনেকটা এগিয়ে তৃণমূল। ফাইল চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৭:৪০
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরে হিঙ্গলগঞ্জ ছিল বামেদের দুর্গ। রাজ্য জুড়ে পালা বদলের পরে সেই হিঙ্গলগঞ্জে এখন টিমটিম করে জ্বলছে তারা। গত দু’টি বিধানসভা ভোটেই তৃণমূল ৫০ শতাংশের উপরে ভোট ধরে রাখতে পেরেছে এই ব্লকে। অন্য দিকে, তৃণমূল বিরোধী ভোট ক্রমশ সরে গিয়েছে বিজেপিতে। এক সময়ে বামেদের সরাতে একটি পঞ্চায়েতে জোট বেঁধেছিল তৃণমূল-বিজেপি। এখন তারাই একে অপরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে অনেকটা এগিয়ে তৃণমূল। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তাদের আধিপত্যে ফাটল ধরতে পারে বলে মনে করছে দলেরই একাংশ।

২০১৬ সালের বিধাসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৩ শতাংশ। বামেদের ভোট ছিল ৩৬.০৫ শতাংশ। বিজেপির ভোট ছিল ৮.০১ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভায় বামেরা পেয়েছে মাত্র ৩.০৯ শতাংশ ভোট। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ৪০.৯৮ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৫৩.৭৮ শতাংশ ভোট। বামেদের ভোট যত কমেছে, বিজেপির ভোট তত বেড়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর, রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকায় এগিয়ে আছে। অন্য পঞ্চায়েতেরও বেশ কিছু বুথে এগিয়ে আছে বিজেপি।

হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভা ১৯৭২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা বামেদের দখলে ছিল। মোটামুটি ২০০৩ সাল থেকে চিত্র বদলাতে শুরু করে। ওই বছর তৃণমূল একাধিক পঞ্চায়েত নিজেদের কব্জায় আনে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল গোবিন্দকাটি। এই পঞ্চায়েতে বামেদের হারাতে তৃণমূল ও বিজেপি এক হয়ে বোর্ড গঠন করেছিল। সে সময়ে প্রধান হন দেবেশ মণ্ডল। তিনি বর্তমানে হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূলের বিধায়ক। এ ছাড়া, বিশপুর, দুলদুলি সান্ডেলেরবিল-সহ একাধিক পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসে।

২০০৮ সালে আরও কিছু পঞ্চায়েত বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। এরপরে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে চলে আসে। গত বার পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের সব ক’টি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। বিরোধী দলের পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন হাতে গোনা। জেলা পরিষদের দু’টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসনেও রয়েছে তৃণমূল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, একচ্ছত্র জয়ই বর্তমানে তৃণমূলের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী বর্তমান। পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন ঘটনায় তা সামনেও এসেছে। দলেরই একাংশের দাবি, ব্লক স্তরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। এক দিকে রয়েছেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সইদুল্লা গাজি, অন্য দিকে বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল। তাঁদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোনও দ্বন্দ্ব না থাকলেও উভয়ের সম্পর্ক যে খুব ‘মিষ্ট’ নয়, তা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। তবে ব্লক সভাপতি ও বিধায়ককে একই সঙ্গে বিভিন্ন সভা মিছিল করতে দেখা গিয়েছে একাধিকবার। যদিও অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে বলে জানালেন দলেরই অনেকে।

বিশপুর, রূপমারি, কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় দুই গোষ্ঠী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাধিকবার কোন্দলে জড়িয়েছে। কয়েক মাস আগে বিশপুরের বায়লানি বাজার কমিটির ভোট নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। যার জেরে ভোট স্থগিত করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ভোট এলেই হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়ায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি-বোমা চলে বলে অভিযোগ।

গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টি মানছেন ব্লক সভাপতি সইদুল্লা। তিনি বলেন, “বয়সের দিক থেকে না হলেও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমি বিধায়কের চেয়ে সিনিয়র। আমি দলটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে করি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব দলে সব জায়গায় থাকে। ও সব মিটে যাবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব আসনে জয়ী হবে তৃণমূল।” অন্য দিকে, বিধায়ক বলেন, “আমার তরফে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। এ সবে মদত দেওয়ার মতো কোনও কাজও আমি করি না। প্রার্থী ঘোষণা হলেই সব সব কোন্দল মিটে যাবে। এলাকায় বিরোধীদের কোনও জনসমর্থন নেই।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আমপান থেকে শুরু করে সরকারি ঘরের তালিকায় নাম তোলা, একশো দিনের কাজ— এ সব নিয়ে শাসক দলের একাধিক নেতা, প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে এলাকাবাসীর মধ্যে। একেই অস্ত্র করে পঞ্চায়েত ভোটে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা যাচ্ছে দলের নেতাদের গলায়। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তুলসী দাস বলেন, “আমরা বিধানসভা ভোটে এগিয়ে আছি কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায়। তৃণমূল সন্ত্রাস না করলে আমরা একাধিক পঞ্চায়েতে জয়ী হব।”

যোগেশগঞ্জ, কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় মাঝে মধ্যে মিটিং-মিছিল করলেও অন্যত্র বামেরা তেমন সক্রিয় নয়। ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে সারা বছর তাদের তেমন কোনও কর্মসূচিও চোখে পড়ে না। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “মানুষ দেখেছেন, তৃণমূল রাজ্যে এবং বিজেপি কেন্দ্রে কী করছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে দুই দলকে শিক্ষা দিতে তাঁরা বামেদেরই বেছে নেবেন। সেই প্রবণতা বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জের রাজনীতি সচেতন মানুষের উপরে আমাদের ভরসা আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC internal conflict CPM BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE