Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
Madhyamgram Case

মধ্যমগ্রামের ঘটনার নেপথ্যে কি সাইবার জালিয়াতির চক্র? আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

মধ্যমগ্রামের রানি পার্কে মানসিক নির্যাতনের জেরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর অভিযোগের নেপথ্যে কি তবে সাইবার জালিয়াতিই? যে ঘটনায় বড় কোনও প্রতারণা চক্রের যোগের আশঙ্কা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা।

—প্রতীকী চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই ও প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২২
Share: Save:

মধ্যমগ্রামের রানি পার্কে মানসিক নির্যাতনের জেরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর অভিযোগের নেপথ্যে কি তবে সাইবার জালিয়াতিই? যে ঘটনায় বড় কোনও প্রতারণা চক্রের যোগের আশঙ্কা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, অভিযুক্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মৃত পার্থসারথি মিত্রের অ্যাকাউন্টে পাঠানো টাকার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে সাইবার পুলিশ।

প্রসঙ্গত, রানি পার্কে পার্থের একটি দোকান ছিল। সেই দোকানের ভাড়া চাওয়া ও দেওয়াকে কেন্দ্র করেই পুরো ঘটনার সূত্রপাত। সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেনের নথি বলছে, গত ৯ অগস্ট রাত ১০টা ৫৪ মিনিটে যে পাঁচ হাজার টাকা পার্থসারথির অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে এবং যে অঙ্কের টাকা ‘ব্লক’ হয়েছে সাইবার পুলিশ পোর্টালের মাধ্যমে, সেই টাকা অভিযুক্তের তরফেই পাঠানো হয়েছিল। লেনদেনের আইডি-র মাধ্যমেও সেই তথ্য স্পষ্ট।

পার্থসারথির অ্যাকাউন্টে অভিযুক্ত আকাশ বোধকের পাঠানো পাঁচহাজার টাকাকেই ‘ডিসপিউটেড অ্যামাউন্ট’ বা প্রশ্নযোগ্য অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হিসাবে চিহ্নিত করেছে সাইবার সেল। সাইবার আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রেরকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে বেআইনি আর্থিক লেনদেন, আর্থিক প্রতারণা বা আইন বহির্ভূত কাজের যোগাযোগ থাকলেই সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রেরকের অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি লেনদেনের টাকা অন্য কারও অ্যাকাউন্টে গেলে গ্রহীতার অ্যাকাউন্ট বা প্রেরকের পাঠানো অঙ্কের টাকাকে বাজেয়াপ্ত করে তদন্তকারী সংস্থা। এ ক্ষেত্রে তাই বড় প্রশ্ন, অভিযুক্ত আকাশ কি সংশ্লিষ্ট বেআইনি লেনদেন সম্পর্কে জানতেন, না কি জানতেন না?

সোমবার আকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিজের দাবির পক্ষে প্রমাণ দাখিল করে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট কখনওই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বা সেই অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনেও সমস্যা হয়নি।

যদিও সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ তথা আইনজীবী বিভাসচট্টোপাধ্যায়ের কথায়, যিনি টাকা ‘রিসিভ’ করছেন, তিনি কিছু না জেনেও জটিলতায় পড়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, নিজের প্রাপ্য টাকা নিয়েই অহেতুক হেনস্থা, মানসিক চাপেরমুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। তেমনটাই হয়তো রানি পার্কের ঘটনার ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে অনুমান তাঁর। বিভাসের বক্তব্য, ‘‘এমন ঘটনা সারা দেশে ঘটছে। কোনও কিছু না জেনেও যিনি প্রাপ্য টাকা পান, তিনি পুরোঘটনায় শিকার হচ্ছেন। কারণ, যাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে, সেই অ্যাকাউন্টেই অপরাধমূলক কাজের বিনিময়ে টাকা জমা হয়েছে। আদালত এ নিয়ে একের পর এক রায় দিচ্ছে।’’

অথচ অভিযুক্তের দাবি, তাঁর সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টটি যথাযথ ভাবেই সক্রিয়। টাকা বাজেয়াপ্ত হয়নি। অ্যাকাউন্ট নিয়েও সমস্যা নেই। সাইবার বিশেষজ্ঞদের আর এক অংশও অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রেরকও সাইবার প্রতারণা চক্রের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তাঁর অ্যাকাউন্টেও অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত টাকা এসে থাকতে পারে।

সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিং’-এর ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘অনলাইনে ক্রমাগত টাকা হাত বদল হতে হতে আসে। ফলে লেনদেনে যোগদানকারী যে কেউ এইপ্রতারণার শিকার হতে পারেন। যে হেতু সাইবার সেল পোর্টালের মাধ্যমে এই অভিযোগ দায়ের হয়, তাই পোর্টাল জানে না, কে ভাল আর কে খারাপ। এ ক্ষেত্রে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কাজ করেছেন কিনা, তা দেখতে হবে।’’ বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘অভিযোগকারী পরিবার এফআইআর করলে পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ করবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE