জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজনীতির মঞ্চে ফের অবতীর্ণ হলেন হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে দীর্ঘ দিন জেলে কাটিয়ে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বালু। রাজনীতিতে তাঁকে ফের কতটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল নানা মহলে। তবে রবিবার জ্যোতিপ্রিয় ঘুরে যান তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ায়। পুরসভার দলীয় কাউন্সিলর এবং দলীয় পদাধিকারীদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। যদিও হাবড়ার তৃণমূল নেতা তথা পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘বালুদা এ দিন ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন আমাদের নিয়ে। ভোটে বালুদাই প্রার্থী হবেন বলে আমাদের আশা। তাঁকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জেতানোই আমাদের কাজ।’’
নারায়ণ জানান, বিধানসভা ভোটের আগে ‘বালুদা’র ‘পাখির চোখ’ হাবড়ার উন্নয়ন। তিনি কাউন্সিলরদের বলেছেন, তৃণমূল স্তরে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করতে হবে। ভুয়ো নাম যাতে তালিকায় না থাকে, তা দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় নেতা-কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দুয়ার সরকার প্রকল্পে মানুষ আবেদন করার পরে যাতে সকলে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা দেখতে হবে। রাজ্য সরকারের উন্নয়ন বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি, হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যে একশো শয্যার ভবন তৈরি হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি তা দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করবেন। হাবড়ায় বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ দ্রুত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়।
গত লোকসভা ভোটে হাবড়া বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে। পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ড এবং ৪টি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে হাবড়া বিধানসভা। লোকসভা ভোটে পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার পিছিয়ে ছিলেন। চারটি পঞ্চায়েতের মধ্যে কুমড়া এবং মছলন্দপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকাতেও তৃণমূল পিছিয়ে। পৃথিবা এবং রাউতারা পঞ্চায়েতে এগিয়ে তারা। সব মিলিয়ে হাবড়া বিধানসভা এলাকায় কাকলি পিছিয়ে ছিলেন ১৯ হাজার ৯৩৩ ভোটে। ‘বালু-ঘনিষ্ঠ’দের দাবি, ওই সময়ে বালুদা জেলে ছিলেন বলেই ফল খারাপ হয়েছিল।
বালুর এ দিনের বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করে হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওঁর উচিত, আগে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করা। কারণ, জনতার আদালতে আসার আগে ওঁকে হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের মুখোমুখি হতে হবে। এটা মনে রাখা উচিত, এখনও অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পাননি!’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘যে ভাবে গরিব মানুষের খাদ্যসামগ্রী তিনি (বালু) লুট করেছেন, তাতে হাবড়ার মানুষ ওঁর উপরে ক্ষিপ্ত।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)