Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Habra

কালীপুজো নিয়ে মেতে ওঠেন সুভাষ-আরিফরা 

মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, খিচুড়ি রান্না করা, প্রতিমা বিসর্জন দিতে যাওয়া পর্যন্ত এক সঙ্গেই করেন সুভাষ-সাইফুল্লারা।

এই পুজো ঘিরেই আনন্দ উৎসব চলে গুমায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

এই পুজো ঘিরেই আনন্দ উৎসব চলে গুমায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩০
Share: Save:

ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে সুভাষ, হরদেব, মানব, সাইফুল্লা, সোবান, আরিফদের। শুক্রবার থেকে গ্রামে ধুমধাম করে শুরু হয়েছে কালী পুজো। তাই কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছেন ওঁরা।

মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, খিচুড়ি রান্না করা, প্রতিমা বিসর্জন দিতে যাওয়া পর্যন্ত এক সঙ্গেই করেন সুভাষ-সাইফুল্লারা।

এলাকার মানুষের কথায়, ‘‘আশোকনগরের গুমা স্টেশন রোড সংলগ্ন ছাত্রবীথি ক্লাবের কালী পুজোর আয়োজনে কোনও ভেদাভেদ নেই। সকলেই সমান। কালী পুজো এখানে সম্প্রীতির উৎসব।’’

দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এ ভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সম্প্রীতির পুজোতে মেতে ওঠেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ বার করোনা পরিস্থিতিতে পুজোর আয়োজন অন্য বারের তুলনায় কিছুটা কম। এ বার মণ্ডপ খোলামেলা করা হয়েছে। দূর থেকে মানুষ প্রতিমা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। মণ্ডপের মধ্যে দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কালীপুজোয় প্রত্যেকবার চলে খিচুড়ি খাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে করোনার কারণে এ বার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তার বদলে রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার পুজোর উদ্বোধন করেছেন বারাসত পুলিশ জেলার ডিএসপি রোহেদ শেখ। করোনার বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন এমন ১০০ জনকে ক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক, পুলিশ, নার্স, আশাকর্মী, দমকলকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের। শনিবার শিশু দিবস উপলক্ষে শিশুদের জামা, প্যান্ট এবং গরিব মানুষদের বস্ত্র ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। হরদেবদের পাশাপাশি খিচুড়ি রান্নায় যোগ দেন আরিফ-সোবানরা। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে খিচুড়ি পরিবেশনও করেন। হাবড়া থেকে কালী প্রতিমা আনা হয়। অন্য বছরগুলিতে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিদ্যাধরী খালে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ বার শোভাযাত্রা করা হবে না। প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে, বিসর্জন গোটা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভাবে থাকেন সুভাষ পাল, হরদেব কর্মকার, মানব মজুমদার, সাইফুল্লা গাজি, সোবান মল্লিক, আরিফরা। শুধু কালী পুজো নয়, দুই ধর্মের মানুষ একে অপরের যে কোনও সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করেন।

এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সম্পর্কের ভিতটা বহু দিন ধরেই মজবুত। কোথাও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এখানে তার প্রভাব পড়তে দেন না এলাকার মানুষ। ক্লাবের সভাপতি সিদ্দিক হোসেন বলছিলেন, ‘‘ইদে সুভাষ-হরদেবরা আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান। আমাদের জলসা অনুষ্ঠানেও সক্রিয় সহযোগিতা করেন। আমরাও তাঁদের অনুষ্ঠানে সক্রিয় সহযোগিতা করি।’’ পুজো কমিটির সম্পাদক বিজন দাস বলেন, ‘‘এখানে সকলেই ভাই ভাই। আমাদের পরিচয় আমরা মানুষ। প্রতি বছর ৪ জুন আমরা একত্রে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করি। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি শুয়ে রক্ত দান করেন।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, শুধু পুজো বা ইদ নয়, রাতে অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, বিয়ের আয়োজন সব কাজই যৌথ ভাবে এগিয়ে এসে একে অপরকে সাহায্য করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Kali Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE