Advertisement
E-Paper

অসুস্থ স্বামীকে পাঁজাকোলা করে তুলে ঘর ছাড়তে হল

গাইঘাটা ব্লকের গাজনা গ্রামে থাকি। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যার ভুগছেন। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে একেবারেই শয্যাশায়ী। দুই ছেলে প্রশান্ত এবং সুব্রত দিনমজুরের কাজ করে। অভাবের সংসারে স্বামীর চিকিৎসা করাতে বহু টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে।

কাঞ্চন কীর্তনিয়া (গাজনা, গাইঘাটা)

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৬

গাইঘাটা ব্লকের গাজনা গ্রামে থাকি। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যার ভুগছেন। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে একেবারেই শয্যাশায়ী। দুই ছেলে প্রশান্ত এবং সুব্রত দিনমজুরের কাজ করে। অভাবের সংসারে স্বামীর চিকিৎসা করাতে বহু টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে দিন কুড়ি ধরে প্রবল বৃষ্টিতে বাড়ির চারিপাশ জলমগ্ন হতে শুরু করেছে। প্রথমে বাড়ির উঠোন, পরে ঘরের মধ্যেও জল ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় বোলদেঘাটা খালের জল উপচে এলাকা প্লাবিত করেছে। বৃষ্টির জন্য ছেলেদের কাজকর্ম বন্ধ। রোজগার নেই। ঘরে জল ঢুকলেও অন্যত্র যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমাদের নেই। সে কারণেই ঘরে ইট পাতিয়ে খাট উঁচু করে অসুস্থ স্বামীকে রেখেছিলাম। ওঁকে টানাহেঁচড়া করাটাও ঝুঁকির।


অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ত্রাণ শিবিরের দিকে চলেছেন কাঞ্চনদেবী।
ভ্যান টানছেন ছেলে সুব্রত। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

আর জলের মধ্যে স্বামীকে কোথায় নিয়ে যাব, বুঝেই উঠতে পারছিলাম না। ভগবানকে ডাকছিলাম, আর যেন জল না বাড়ে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া নতুন করে বৃষ্টিতে ঘরে জল হু হু করে বাড়তে শুরু করল। হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে গেল। আর থাকা গেল না। ঘর ছাড়তেই হল। বাড়িতে মেয়ে এবং তার ছ’বছরের সন্তান আছে। শনিবার সকালের পরে ঘরে আর স্বামীকে রাখতে পারলাম না। দেরি করলে হয় তো আমাদের জলে ডুবেই যেতে হতো। হাতে টাকাকড়িও বিশেষ নেই। তা সত্ত্বেও স্বামীকে কোলে করে প্রথমে একটি নৌকায় তুললাম। ছেলে সুব্রত সাহায্য করল। নৌকায় বিছানা করে ওঁকে শুইয়ে নিয়ে এলাম সড়কে। কিন্তু গোবরডাঙা-পাঁচপোতা সড়কও তো জলের তলায়। ছেলে ৫০ টাকা দিয়ে একটি ভ্যান ভাড়া করে এনেছিল। নৌকা থেকে স্বামীকে নামিয়ে কোলে করে ফের ভ্যানে তোলা হল। ছেলেই ভ্যান টানতে টানতে দীর্ঘ জল পেরিয়ে স্বামীকে নিয়ে তুলল স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে। কী ভাবে স্বামীর চিকিৎসার করাব, কী ভাবেই বা জল পেরিয়ে স্বামীকে দূরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব, জানি না। ঘরের যা ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়েই গিয়েছে। জল সরলেও ঘরে ফিরতে পারবো কিনা জানি না। এখন যদি ত্রাণ শিবিরে এসে চাল-ডাল কপালে জোটে, তা দিয়েই হয় তো ক’টা দিন খেয়ে বাঁচব।

gaighata flood rain south bengal primary school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy