E-Paper

সঙ্কটে কপিলমুনি মন্দির, ভাঙন রুখতে পরিকল্পনা 

সমুদ্রতট বরাবর ১ নম্বর রাস্তা থেকে ৫ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ পুঁতেছিল প্রশাসন। সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়ে গাছগুলি এখন সমুদ্রগর্ভে।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৭
দুর্যোগে এ ভাবেই ক্ষয়ে গিয়েছে কপিলমুনি মন্দিরের সোজাসুজি ২ নম্বর স্নানঘাটের পাড়।

দুর্যোগে এ ভাবেই ক্ষয়ে গিয়েছে কপিলমুনি মন্দিরের সোজাসুজি ২ নম্বর স্নানঘাটের পাড়। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের সোজাসুজি ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বর সৈকত পর্যন্ত একাধিক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয় হয়েছে। এর জেরে মন্দির থেকে সৈকতের দূরত্ব কমে এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫০০ মিটারের কাছাকাছি। গত বছর গঙ্গাসাগর মেলা শুরুর আগে মন্দিরের সামনে ভাঙন রুখতে সেচ দফতর প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘টেট্রাপড প্রোজেক্ট’-এর কাজ শুরু হয়েছিল। এর আওতায় কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই তা গ্রাস করে নেয় সমুদ্র। মূলত, ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করায় এই বিপত্তি ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ করেন অনেকে। মন্দির প্রাঙ্গণের কাছাকাছি সমুদ্রের ভাঙন আটকাতে সামনের বছর গঙ্গাসাগর মেলার আগে ফের ‘পাইলট প্রোজেক্ট’-এর সাহায্য নিচ্ছে সেচ দফতর।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি গঙ্গাসাগরে আসেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, ভাঙড়ের বিধায়ক সওকত মোল্লা, পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীরকুমার জানা। কপিলমুনির প্রাচীন মন্দিরটি সমুদ্র গ্রাস করেছে অনেক বছর আগেই। নতুন মন্দিরের কাছাকাছি এগিয়ে আসছে সমুদ্র। মন্দিরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ভাঙনের ফলে গঙ্গাসাগর মেলার মাঠের আয়তনও ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে। প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে ১০০-২০০ ফুট এলাকা সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

সমুদ্রতট বরাবর ১ নম্বর রাস্তা থেকে ৫ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ পুঁতেছিল প্রশাসন। সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়ে গাছগুলি এখন সমুদ্রগর্ভে।রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের জন্য দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে পরিকল্পনা করছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে গঙ্গাসাগরের ভাঙন ঠেকাতে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ ও রাজ্যের পুর দফতর যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে। ম্যাকিন্টোজ় বার্ন সংস্থাকে ক্ষয় আটকানোর পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শের পরে চেন্নাই আইআইটির দ্বারস্থ হয় রাজ্য। গঙ্গাসাগরের ভাঙন সমস্যা কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তার পরিকল্পনা করেন চেন্নাই আইআইটির বাস্তুকারেরা। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষও সংশ্লিষ্ট ভাঙনপ্রবণ এলাকার সমীক্ষায় সহযোগিতা করে। জলের তলার মাটি কী ভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, সেই রিপোর্টও তৈরি হয়। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ঠিক হয়, এর মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা দেবে রাজ্য, বাকিটা দেবে কেন্দ্র। প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রতি বছর যে ভাবে গঙ্গাসাগরে সমুদ্রের পাড় ভাঙছে, তাতে এখানকার কপিলমুনি মন্দিরটি সঙ্কটে রয়েছে। ভাঙন রোধ করা না গেলে মন্দির রক্ষা করা যাবে না। ভাঙন রোধের জন্য রাজ্যের পরিবেশ দফতর ও কেন্দ্রের কোস্টাল রেগুলেশন জ়োনের ছাড়পত্র দরকার। কিন্তু এই অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি।”

পার্থ এ দিন বলেন, “চেন্নাই আইআইটি যে সমীক্ষা করেছিল, তা পর্যালোচনা চলছে দ্রুত বাস্তবায়িত করার জন্য। কিন্তু তার আগে ২০২৪ গঙ্গাসাগর মেলা সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য আলাদা প্রোজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। ২৯ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু হবে। কুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র জাতীয় মেলা ঘোষণা করে, কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলাকে করে না। এটা দ্বিচারিতা!” বঙ্কিম বলেন, “ভাঙন রুখতে পরিকল্পনা তৈরি। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সিআরজেডের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্র সরকারও এই প্রকল্পের জন্য টাকা দিতে চাইছে না। তাই কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া রাজ্য সরকারের পক্ষে একা ১৪১ কোটি টাকা দিয়ে এই কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gangasagar River Erosion

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy