Advertisement
E-Paper

গঙ্গায় তলিয়ে গেলে খুঁজবে কে, ডুবুরি-সঙ্কট

দিন কয়েক আগে বছর পনেরোর এক কিশোর মামার অন্ত্যেষ্টিতে জগদ্দলের বিচুলিঘাটে গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায়। চোখের সামনে দেখেও কিছু করতে পারেননি ওই কিশোরের আত্মীয়েরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কিছুই করতে পারেনি তাঁরা।

নিশ্চিন্ত স্নান কোনও বিপদ ডেকে আনবে না তো? — গাড়ুলিয়ায় ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিশ্চিন্ত স্নান কোনও বিপদ ডেকে আনবে না তো? — গাড়ুলিয়ায় ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:৪৪
Share
Save

দিন কয়েক আগে বছর পনেরোর এক কিশোর মামার অন্ত্যেষ্টিতে জগদ্দলের বিচুলিঘাটে গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায়। চোখের সামনে দেখেও কিছু করতে পারেননি ওই কিশোরের আত্মীয়েরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কিছুই করতে পারেনি তাঁরা। কারণ স্থানীয় প্রশাসনের কোনও ডুবুরির ব্যবস্থা নেই। পরের দিন ওই ঘাটের বেশ কিছুটা দূরে একটি চটকলের জেটির কাছে গোলাঘরের বাসিন্দা টুকাই নামে ওই কিশোরের দেহ ভাসতে দেখা যায়।

টুকাইয়ের মতোই গত এক বছরে ব্যারাকপুরের অয়ন দে, পানিহাটির সমর কুণ্ডু, বরাহনগরের সুতপা সাহারা স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পরিবারের লোকেরা পুলিশে খবর দেওয়া আর ঘাটে বসে হা-হুতাশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি।

জলই জীবন। আবার জল জীবন কাড়েও। গঙ্গাপাড়ের মানুষ এ কথা বিলক্ষণ জানেন। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গঙ্গার ৩৬৭টি ঘাটে প্রতিদিন কত মানুষ স্নান করতে নামেন তার হিসেব নেই। শহর ব্যারাকপুরের বাইরেও পুর ও পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে জলাশয়ের সংখ্যা কম নয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা বছরে অন্তত ২৪-২৫টি তো ঘটেই। কিন্তু উদ্ধারের পরিকাঠামো শূন্য। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘জলে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় খোঁজাখুঁজির জন্য যে প্রশিক্ষিত বাহিনী ও আধুনিক সরঞ্জামের প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। সে কারণে সমস্যা আছে। গঙ্গায় তলিয়ে গেলে যে ভাবে তল্লাশি চালাতে হয় তার জন্য অনেক উন্নত এবং বড় পরিকাঠামো প্রয়োজন। কিন্তু উদ্যমী কিছু মানুষকে পেলে আমরা অন্তত প্রাথমিক পদক্ষেপ করতে পারি।’’

জনসংখ্যা এবং ঘনত্বের নিরিখে রাজ্যের অন্যতম বড় মহকুমা ব্যারাকপুরে দুর্বল প্রশাসনিক পরিকাঠামোগুলির মধ্যে অন্যতম ডুবুরি-সঙ্কট। জলে ডোবার পর উদ্ধারের জন্য ভরসা সেই মৎসজীবী আর ঘাটের আশপাশে থাকা লোকজন। গঙ্গা বা পুকুরে কেউ তলিয়ে গেলে তাঁকে উদ্ধার করতে হিমসিম খেতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেহ উদ্ধার হয় অন্য ঘাটের কাছে বা জেটির পাশে। তল্লাশির জন্য প্রশিক্ষিত ডুবুরি না থাকায় প্রশাসনও যথাযথ পদক্ষেপ করতে পারে না বলে অভিযোগ।

অথচ, বছর পনেরো আগে এই মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগেই অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধারের জন্য একটি ‘স্কেলিটন টিম’ তৈরি হয়েছিল। তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও ছিল। লাইফ জ্যাকেট, রবারের নৌকো, জাল, টর্চ ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। প্রদীপ মুখোপাধ্যায় নামে ব্যারাকপুরের মণিরামপুরের বাসিন্দা এক দমকলকর্মী ছিলেন ওই বাহিনীর প্রশিক্ষক। প্রদীপবাবুর দাবি, তিনি নিজে গঙ্গা ও পুকুর থেকে ৩০ জনের বেশি মানুষকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। প্রশাসনের পরিসংখ্যান বলে, ২০০৭ সাল পর্যন্ত জলে ডোবার সংখ্যা না কমলেও উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছিল।

কিন্তু প্রদীপবাবু অবসর নেওয়ার পর প্রশাসনেরও উদ্যোগের অভাব থাকায় এই বাহিনী প্রশিক্ষণের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। কর্মসংস্থান বা অন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকে অন্য কাজে বাইরে চলে যান। সরঞ্জামগুলিও ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হতে থাকে। বেশ কিছু বাতিল করে দেওয়া হয়। খাতায়-কলমে ওই বাহিনী এখনও রয়েছে ঠিকই। কিন্তু কেউ তলিয়ে গেলেও বাহিনীর কিছু করার থাকে না নেহাতই উদ্যোগ, যোগাযোগ এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে। প্রদীপবাবুর বয়স হয়েছে যথেষ্ট। এখন ছোটদের সাঁতার শেখান। তাঁর কথায়, ‘‘মহকুমাশাসক চাইলে আমি এখনও নতুন ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফের বাহিনী তৈরি করতে পারি। তবে, প্রশাসনকেও ওই স্বেচ্ছাসেবীদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা জলে ঝাঁপাই কিন্তু দিন-রাত এক করে জলে তল্লাশির ন্যূনতম সাম্মানিকও যদি না মেলে, তবে কতদিন উৎসাহ থাকে?’’

বর্তমানে জলে বড় কোনও দুর্ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে লালবাজারে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। ওই বাহিনীর ডুবুরিরা কলকাতা থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে জলে নেমে তল্লাশি চালান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সময় একটা মস্ত বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। দিনের দ্বিতীয়ার্ধে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে পরের দিন সকাল না হওয়া পর্যন্ত তল্লাশি শুরু হয় না। এই পরিস্থিতিরই পরিবর্তন চান অনেকে।

Drowning Diver Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।