কয়েকজন পড়ুয়া নিেয় কোনও রকমে চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসীদের জমি, অর্থ ও শ্রমদানে গড়ে ওঠে স্কুলটি। পথচলা শুরু ১৯৬৯ সালে। কিন্তু আজও শিক্ষকের অভাব ঘুচল না বয়ারগদি দুঃখের পোল হাইস্কুলের। মাধ্যমিকের অনুমোদন মিললেও শিক্ষকের অভাবের জন্য আজও ঠিকমত চালু নয় স্কুলটি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিৎ হালদার বলেন, ‘‘আমরা মাত্র তিনজন স্থায়ী শিক্ষক। মাধ্যমিক পর্যন্ত চালাব কী করে? নিজেদের টাকায় স্কুলে দু’জন গ্রামবাসীকে সহায়ক হিসেবে রেখেছি। স্কুলের এই সঙ্কটের কথা একাধিকবার শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।’’ সহশিক্ষক জ্যোতির্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘এই স্কুলের সামনে দিয়েই প্রতিদিন প্রায় আটশো ছেলেমেয়ে সাত কিলোমিটার দূরে অন্য স্কুলে যায়। খুব খারাপ লাগে। অভিভাবকদেরও আবেদন নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা যে যুক্তি দেন তাতে আর কিছু বলার থাকে না!’’
সমস্যা মেটানো তো দূরের কথা, নিয়মিত স্কুলে মদের আসর বসে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলের সময়টুকু বাদ দিয়ে সব সময় মদের আসর বসে। চলে তাস খেলাও। ফলে এই স্কুল সম্পর্কে অনেকেরই খারাপ ধারণা জন্মেছে বলে জানালেন এলাকাবাসী ধনঞ্জয় হালদার।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ যে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, উঠোনে পড়ে রয়েছে নেশার দ্রব্যের প্যাকেট, মদের গ্লাস। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিপিকা দাস, ছাত্র পিন্টু হালদার বলে, ‘‘প্রত্যেকদিন আমরাই ঝাঁট দিয়ে এগুলি পরিষ্কার করি। এ সব দেখে আর স্কুলে যেতে ভাল লাগে না।’’
প্রসঙ্গত, মথুরাপুর ২ ব্লকের কৌতলা পঞ্চায়েত এলাকার বয়ারগদি দুঃখের পোল হাইস্কুলটির নামকরণ হয় দু’টি গ্রাম বয়ারগদি, দুঃখের পোলের নামে। এই গ্রামগুলির শিক্ষানুরাগীরা গড়ে তোলেন এই স্কুলটি। ২০০৫ সালে মাধ্যমিকের অনুমোদন মেলে। এখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ৫৬। কিন্তু শিক্ষকের অভাব ও মদ, জুয়ার আড্ডার জন্য অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু যে সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসে তাই নয়, শৌচাগার নোংরা করে যায় তারা, বলে থানায় অভিযোগ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রহমতুল্লা পাইক বলেন, ‘‘এখন আর ওই স্কুলে পড়ার মতো পরিবেশ নেই। তাই আমি আমার দুই মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।’’ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও মাঝে মধ্যে টহল দেওয়ায় সমাজবিরোধীদের উপদ্রব কমেছে বলে দাবি পুলিশের।
স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ সাউ বলেন, ‘‘ছাত্র সংগ্রহ করতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু তাও ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই ছাত্রছাত্রীদের থেকে ভর্তির ফি নেওয়া হয় না। শিক্ষকেরা নিজেদের টাকায় স্কুলটি চালায়।’’ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে কোনও শিক্ষাকর্মী নেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি, দশম শ্রেণি পর্যন্ত আটটি শিক্ষক পদ শূণ্য। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় স্কুল সংগঠক শিক্ষকেরা তাঁদের স্থায়ীকরণের দাবিতে একাধিক মামলা করেছিলেন। সেই মামলা ও নানা কারণে তখন স্কুলে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা যায়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মৃন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘এসএসসি থেকেই শিক্ষক নিয়োগের জন্য শূণ্যপদ পূরণের অনুমোদন হয়ে রয়েছে। পুরনো নিয়মে অনুমোদিত স্কুল বলেই এসএসসি ছাড়া অন্য কোনওভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব নয়। স্থানীয় সমস্যা মেটাতে প্রশাসন ও এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy