Advertisement
E-Paper

ছেলে-বৌমা বেড়াতে, মায়ের ঠাঁই বারান্দায়, বরাদ্দ আধ প্যাকেট মুড়ি

বারান্দায় বসে সন্ধ্যা থেকে এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা। রাত বাড়লেও কান্না থামেনি তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৮
অবহেলিত: বারান্দায় বসে বৃদ্ধা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

অবহেলিত: বারান্দায় বসে বৃদ্ধা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বারান্দায় বসে সন্ধ্যা থেকে এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা। রাত বাড়লেও কান্না থামেনি তাঁর। অবশেষে কান্না শুনে শুক্রবার রাতে ব্যারাকপুর কালিয়ানিবাসের ওই বৃদ্ধার পাশে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। জানা যায়, বৃদ্ধার ছেলে-বৌমা তাঁদের মেয়েকে নিয়ে গুয়াহাটি বেড়াতে গিয়েছেন।

অভিযোগ, সব ঘর তালাবন্ধ করে বেড়াতে যাওয়ার আগে বৃদ্ধা মায়ের খাওয়ার ব্যবস্থাটুকুও করে যাননি তাঁর ছেলে-বৌমা। ওই বৃদ্ধা জানান, গত বৃহস্পতিবার তাঁর ছেলে-বৌমা ঘুরতে যান। যাওয়ার আগে দু’টি ঘর এবং রান্না ঘরে তালা দিয়ে যান। বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছিল বারান্দায়। সেই বারান্দা এতই অপরিসর যে, সেখানে কোনও মতে বসা যায়, শোওয়া যায় না। মায়ের খাওয়ার জন্য ছেলে বরাদ্দ করেছিলেন আধ প্যাকেট মুড়ি ও একটি ব্যাগে কয়েকটি কাপড়।

বৃহস্পতিবার সেই মুড়ি খেয়েই কাটান বৃদ্ধা মা রায়মণি ভট্টাচার্য। শুক্রবার সারা দিন কোনও মতে কাটিয়ে সন্ধ্যায় খিদে-তেষ্টায় কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে রতন ভট্টাচার্য এবং বৌমা স্বাতী ভট্টাচার্য দু’জনেই শিক্ষক। স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে রায়মণিদেবী স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে ব্যারাকপুরের পুর প্রধানের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। পুর প্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। বৃদ্ধার ছেলে ফিরলে কথা বলা হবে।’’

প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধার ছেলে ও বৌমা দু’জনেই স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ান। তাঁদের বছর দশেকের একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী যে স্কুলে পড়ান, তার প্রিন্সিপাল কুণাল ঘটক। রতনবাবুর সহকর্মীদের মাধ্যমে খবর পান তিনি। কুণালবাবু বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমি রতনের বাড়ি যাই। আমাদের স্কুলে থাকার ঘর রয়েছে। সেখানে ওঁকে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি। আপাতত আমিই ওঁর জন্য দু’বেলা খাবার পাঠাচ্ছি।’’

এখন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রয়েছেন রায়মণিদেবী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা কালিয়ানিবাসে ভাড়া রয়েছেন। বৃদ্ধার তিন ছেলে। বড় এবং মেজ ইছাপুরে থাকেন। তাঁরা স্বচ্ছল বলেই জানিয়েছেন তিন ছেলের মা। কিন্তু কেউ মায়ের খোঁজ রাখেন না। কেন? ছলছল চোখে রায়মণিদেবী বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকেই সব থেকে বেশি ভালবাসতাম। আমার যা ছিল, সবটা ওকে দিয়েছি। তার পর থেকেই অন্য দুই ছেলে আর সম্পর্ক রাখেনি আমার সঙ্গে।’’ তাঁর অভিযোগ, এর আগে শীতের রাতেও তাঁকে একাধিক বার বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন তাঁর আদরের ছোট ছেলে।

এ দিন কুণালবাবু জানান, রতনবাবুর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি উল্টে তাঁর মায়ের সম্পর্কে হাজারো অভিযোগ করেছেন। কুণালবাবু আরও বলেন, ‘‘ওঁকে বলেছি, লোকে বাইরে গেলে বাড়ির কুকুর-বেড়ালের জন্যও ব্যবস্থা করে যায়। আশ্চর্যের কথা, তার পরে এক বারও সে ফোন করে মায়ের খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি!’’

এ দিন রতনবাবুকে বারবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এসএমএস-এর উত্তরও দেননি।

Guwahati Old woman গুয়াহাটি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy