Advertisement
E-Paper

থালা হাতে মিড-ডে’র লাইনে পড়ুয়া

ভর দুপুর। থালা হাতে দাঁড়িয়ে কিছু বাচ্চারা। একদল সবে খেতে বসেছে। তাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে তারা। অথবা খিদে পেটে ঠা ঠা রোদে মাঠে ছোটাছুটি করবে। কারণ, ওই একটি মাত্র ঘর-বারান্দায় ঠাসাঠাসি করে সকলকে এক সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানো যায় না।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৪:৩০
অপেক্ষা: আগের ব্যাচের খাওয়া শেষ হলে পাত পড়বে এদের— নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: আগের ব্যাচের খাওয়া শেষ হলে পাত পড়বে এদের— নিজস্ব চিত্র

ভর দুপুর। থালা হাতে দাঁড়িয়ে কিছু বাচ্চারা। একদল সবে খেতে বসেছে। তাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে তারা। অথবা খিদে পেটে ঠা ঠা রোদে মাঠে ছোটাছুটি করবে। কারণ, ওই একটি মাত্র ঘর-বারান্দায় ঠাসাঠাসি করে সকলকে এক সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানো যায় না। খাওয়ার পর্ব শেষ হলে ওই ঘরেই ফের শুরু হয় ক্লাস। একটি ক্লাস চললে বাকি তিনটি ক্লাসের বাচ্চারা বাইরেই থাকে বেশিরভাগ সময়টা।

পাথরপ্রতিমার ছোট বনশ্যামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এটাই দস্তুর।

কাকদ্বীপ মহকুমায় প্রাথমিক স্কুলগুলির কোথাও চাঙড় খসে পড়ছে। কোথাও ফাটা দেওয়াল দিয়ে নিয়মিত জল পড়ছে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক সময়ে পাশের ক্লাবে ক্লাস করাতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকেরা। মিড ডে মিল বা ক্লাস চালানোর সমস্যায় জর্জরিত ছোট বনশ্যামনগরের স্কুলটিও।

এই স্কুলটি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে দু’টি ঘর ছিল। সাত বছর আগে ‘বিপজ্জনক’ বলে একটি ভেঙে দেওয়া হয়। এখন একটি মাত্র ক্লাসঘরই সম্বল। প্রধান শিক্ষক বিভাসচন্দ্র গুড়িয়া বলেন, ‘‘৯৬ জন পড়ুয়া। এতগুলি বাচ্চাকে বেশিরভাগ সময়ই রোদে বাইরে থাকতে হচ্ছে। গরমে ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি খাওয়ার ঘর তৈরির জন্য জায়গা খুব প্রয়োজন।’’

নামখানার নাদাভাঙা পূর্ব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। যে কোনও দিন চাঙড় খসে পড়তে পারে। প্রায় এগারো বছর হতে চলল, সংস্কার হয়নি স্কুলের বাড়ি। চারদিকে ফাটল দিয়ে বর্ষার সময়ে জল ঢোকে ক্লাসে। স্কুলের বারান্দায় বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে কংক্রিটের বিম।

প্রধান শিক্ষিকা শিবানী গুড়িয়া বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশনের ইঞ্জিনিয়াররা দেখে বলে গিয়েছিছেন, বারান্দার ওই দিকটায় যেন কোনও বাচ্চা না যায়। কিন্তু পাঁচটা ঘরের দু’টি অকেজো। বারান্দা ছাড়া মিড-ডে মিল বাচ্চাদের খাওয়াবো কোথায়?’’

কাকদ্বীপের সামন্তরচক ভগবতী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতীন পান্ডা জানান, এই স্কুলের বয়স ৫২ বছর। ২০১৪ সালে স্কুলের দু’টি ঘরের চাল ঝড়ে উড়ে যায়। রান্নাঘরেও ক্লাস নিতে হয়। অতীনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘যখনই এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে বলতে যাই, তখনই খাতায়-কলমে আমাদের ৩টি শ্রেণিকক্ষ দেখানো হয়। রান্নাঘরে ক্লাস করাতে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কী করব?’’

এক বছর আগে ঝড়ে টালির ছাদ ভেঙে পড়ার পর একটিই শ্রেণিকক্ষে কোনও রকমে ক্লাস চলছে ঢোলাহাটের নন্দকিশোরপুর প্রাথমিক স্কুলে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার কথা প্রশাসনিক কর্তাদের জানানো হয়েছে। সমস্যা মেটানো তো দূরের কথা, এখনও পর্যন্ত পরিদর্শনই হয়নি।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেরামতি ও অন্য খরচ বাবদ স্কুলগুলিকে বছরে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকদের বক্তব্য, ওই সামান্য টাকা দিয়ে বড় কাজ করে ওঠা প্রায় অসম্ভব।

জেলা প্রকল্প আধিকারিক দীপায়নকুমার দাস বলেন, ‘‘এই টাকায় যদি কাজ না হয়, সে জন্য স্কুলগুলি আমাদের কাছে আবেদন করতে পারে। শিক্ষা দফতর স্কুলগুলির আবেদন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়।’’

Mid day meal Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy