নজর: সেই স্কুলেই টহল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। যশুরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গত পঞ্চায়েত ভোটের দিনই প্রাণ গিয়েছিল উজ্জ্বল শূর ও সুশীল দাস নামে দুই তৃণমূল কর্মীর। সেই রক্তাক্ত দিনের কথা আজও ভোলেনি হাবড়ার যশুরের মানুষ। ফের ভোট আসছে। এলাকার মানুষের আশঙ্কা, সেই দিন আবার ফিরে আসবে না তো?
সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ ওই গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা রুট মার্চ করেন। বাহিনীর সঙ্গে থাকা নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের গ্রামের মানুষ পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতার কথাও জানান। তাঁদের কাছে গ্রামবাসীর অনুরোধ, যাতে শান্তিতে ভোট পর্ব সম্পন্ন হয়। আলপনা দাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা চাই এ বার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে। জওয়ানরা সেই আশ্বাস দিয়েছেন।’’
পঞ্চায়েত ভোটের দিন কী হয়েছিল যশুর এলাকায়?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাত্মা শিশিরকুমার আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সকাল থেকে মানুষ ভোটও দিচ্ছিলেন। দুপুরের পর থেকে এলাকায় শুরু হয় বাইক বাহিনীর তাণ্ডব। বিকেলে ওই স্কুলের সামনে চড়াও হয় একদল বাইক বাহিনী। অভিযোগ, তাঁরা জোর করে বুথে ঢুকে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা করে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো মানুষ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। শুরু হয় গোলমাল। উত্তেজিত জনতা দুই যুবককে ধরে মারধর শুরু করে। বাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনাতেই মৃত্যু হয় উজ্জ্বল শূর ও সুশীল দাসের। সে দিনের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে ফের ভোটের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল।
শাসকদলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, বিজেপির গুন্ডাবাহিনী পরিকল্পিত ভাবে তাঁদের কর্মীদের খুন করেছিল। বিজেপির দাবি ছিল, জনরোষেই ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে সিআইডি ঘটনার তদন্তভার নেয়।
সোমবার যশুর এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, যশুর ছাড়াও এ দিন আটুলিয়া, কুমড়া, কাশিপুর, নাংলা, গোয়ালবাটি, ফুলতলা এলাকায় রুটমার্চ হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতি উত্তেজনা প্রবণ এলাকাগুলোতে এ দিন রুটমার্চ হয়েছে। এলাকার মূল সড়ক, গ্রামের ইট ঝামা রাস্তা ধরেও বাহিনীর জওয়ানেরা টহল দিয়েছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ রুটমার্চ দেখেছেন। যশুরের ওই স্কুলেও গিয়েছিল বাহিনী। স্কুল চত্বরে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জওয়ানদের কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
কমিশনের প্রতিনিধিরা গ্রামবাসীদের বলেন, ‘‘কোনও অসুবিধা হলে ১৯৫০ নম্বরে ফোন করবেন।’’ নির্বাচন কমিশনের তৈরি ‘সি-ভিজিল অ্যাপ’ সম্পর্কেও তাঁদের সচেতন করা হয়।
হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অজিত সাহা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আরও বেশি করে টহল দিক আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অতিরিক্ত টহলের ফলে শান্তিপূর্ণ এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিজেপির সন্ত্রাসে পঞ্চায়েত ভোটে এক প্রার্থী-সহ আমাদের তিন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল।’’ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ করাতে মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা কেউ ভুলতে পারেননি। উল্টে আমাদের কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’
হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এখানে পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ভোট গ্রহণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে গণনা কেন্দ্রেও ছাপ্পা চলেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলের পর এখন আমাদের দেখতে হবে দেওয়াল দখল হয়ে যাচ্ছে কিনা, স্বাধীন ভাবে প্রচার করতে পারছি কিনা। কমিশনের উচিত তৃণমূল স্তরে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।’’
এ দিন গাইঘাটার বিভিন্ন এলাকাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী রুটমার্চ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy