Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে ‘ভূতে’র ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী

সন্দেশখালির কোড়াকাটি, মণিপুর, হাড়োয়া, মিনাখাঁ বা হাসনাবাদের অনেকের কাছেও শোনা গেল, নিজের ভোট নিজে দিতে না পারার অভিযোগ। তাঁরা জানালেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসে, ততই গ্রামে অশান্তি, মারধর, লুটপাটের আতঙ্ক হয়।

সংশয়: ভোট দিতে পারব তো, প্রশ্ন বৃদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

সংশয়: ভোট দিতে পারব তো, প্রশ্ন বৃদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

কংক্রিটের রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সেতু, ফেরিঘাট— সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে অনেক উন্নয়নই হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে বহু মানুষ সুবিধাও পেয়েছেন। এলাকাবাসীর মূল ক্ষোভ, পঞ্চায়েতে নিজের ভোট নিজে দিতে না পারা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের ভোট দেয় ভূতে।’’ তাঁদের দাবি, ভোট-উৎসবে যোগ দেওয়া তো দূরস্ত, ভোট এলে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে ভিটে ছাড়তে হয় তাঁদের অনেককে। সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ, হাড়োয়ার গ্রামে অধিকাংশই এমন ‘ভূতে’র ভয় পাচ্ছেন।

একটু অন্য ভাবে ‘ভূত’ দেখেছেন শুভ্রারানি বিশ্বাসও। বেশ কয়েক বছর হল বাংলাদেশ থেকে এসে হিঙ্গলগঞ্জে রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে থাকা শুরু করেছেন শুভ্রারানি। স্বামী, ছেলে এবং জামাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। বড় রাস্তার পাশে বেড়ার উপরে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘরে একাই ববাস করেন। গোবর কুড়িয়ে ঘুঁটে বা মশাল তৈরি করে, নারকেল পাতা থেকে ঝাঁটার কাঠি করে বা কলা-কচু বিক্রি করে কোনও মতে দিন চলে। শুভ্রা বলেন, ‘‘বিধবা ভাতা, দু’টাকা কেজি চাল, আয়লার রেশন— সব সুবিধা মিললেও নিজের ভোট নিজে দিতে পারি না।’’

কেন পারেন না?

শুভ্রা বলেন, ‘‘সঙ্গে পার্টির ছেলে বা পুলিশ যায় তো। আমি তো কানে ভাল শুনি না। ওরাই আমার হয়ে বোতামটা টিপে দেয়।’’

স্বাভাবিক ভাবেই নিজের ভোট নিজে দেওয়া হয়ে ওঠে না।

সন্দেশখালির কোড়াকাটি, মণিপুর, হাড়োয়া, মিনাখাঁ বা হাসনাবাদের অনেকের কাছেও শোনা গেল, নিজের ভোট নিজে দিতে না পারার অভিযোগ। তাঁরা জানালেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসে, ততই গ্রামে অশান্তি, মারধর, লুটপাটের আতঙ্ক হয়। সন্দেশখালির কোড়াকাটি আদিবাসীপাড়ার ভবেন সর্দার, স্বপ্না মুন্ডারা বলেন, ‘‘এখানকার বেশিরভাগ মানুষই নিজের ভোট নিজে বড় একটা দিতে পারেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রার্থীদের দাঁড়াতে না দেওয়ার ফলেও ভোট দেওয়া হয়নি। এ বার বসিরহাট লোকসভায় ১৩ জন প্রার্থী থাকলে কী হবে, যে ভাবে বাড়ি ভাঙচুর, মারধর, হুমকি চলছে, তাতে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছেন বলে জানালেন এই বাসিন্দারা। তবে ‘ভূত’ তাড়াবার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় ভোট দিতে পারবেন বলেও মনে করছেন অনেকে।

তৃণমূলের দাবি, সুষ্ঠু ভাবেই মানুষ ভোট দেবেন। বিজেপি নেতাদের কথায়, গন্ডগোল করলে কেন্দ্রীয় বাহিনী কাউকে রেয়াত করবে না। বাম-কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, কে জয়ী হবে, সেটা বড় কথা নয়। মানুষ শান্তিতে ভোট দেবেন, সেটাই উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Violence Ghost Fear
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE