Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেখা নেই বাহিনীর, তাড়া করছে অতীতের আতঙ্ক

গত বছর ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোটে বারাসত লোকসভার দত্তপুকুর, বামনগাছি, রাজারহাট, হাবরায় গোলমাল হয়। এর জেরে হাবরায় দু’জন মারাও যান।

সুনসান: গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে দেগঙ্গার এই ঘোষালের আবাদ এলাকায় চলেছিল বোমা-গুলির লড়াই। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

সুনসান: গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে দেগঙ্গার এই ঘোষালের আবাদ এলাকায় চলেছিল বোমা-গুলির লড়াই। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য 
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

ঠিক এক বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বোমা-গুলিতে মৃত্যু, জখমের ঘটনা ঘটেছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। এই জেলার বারাসত ও বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে ভোট আগামী রবিবার। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় এখনও আধা সামরিক বাহিনীর দেখা নেই বলে অভিযোগ। ফলে লোকসভা ভোটেও সেই রক্তক্ষয়ী দিন ফিরে আসবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় এলাকার মানুষ।

গত বছর ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোটে বারাসত লোকসভার দত্তপুকুর, বামনগাছি, রাজারহাট, হাবরায় গোলমাল হয়। এর জেরে হাবরায় দু’জন মারাও যান। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের দেগঙ্গা থানার ঘোষালের আবাদ এলাকায় ভোটের দিন বুথের সামনে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে তুমুল বোমাবাজি ও গুলির লড়াই বাধে। তাতে জখম হন অনেকেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। গোপনে নদীপথে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসা করানো হয়।

সেই তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। ১৬ মে ফের ভোটগ্রহণের দিন দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই ঘিরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। এ বার ভোট আসতেই তাই চাপা আতঙ্ক এলাকা জুড়ে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, যাঁরা লড়াই করেছিলেন, ভোটের পরে তাঁরা এক হয়ে যান। মাঝখান দিয়ে নিরীহ মানুষেরা আহত হন। এ ভাবে ভোট করার মানে কী?

স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৫০০। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একদা সিপিএমের লাল দুর্গ বলে পরিচিত এই অঞ্চলে চারদিকে উড়ছে শাসক দলের পতাকা। অনেকেই জানালেন, ভোটের দিন আবার গত বারের মতো বাড়ি ছেড়ে পালাতে চান না তাঁরা। বোমা-গুলির বদলে এলাকায় থাকুক আধা সেনা। লক্ষ্মী পাড়ুই জানান, এলাকায় পাকা রাস্তা নেই, সকলের পাকা বাড়ি, কাজ নেই। নদীর মাটি কেটেই সংসার চলে। মায়া পাড়ুই বলেন, ‘‘পেটের ভাতই যদি না জোটে, তা হলে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালাব কী করে?’’

সে দিন গুলিতে জখম হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা দুখে পাড়ুই। স্থানীয়েরা জানালেন, তাঁর পেটের গুলি বার করা হলেও বুকের দু’পাশ ও হাঁটুতে এখনও গুলির ছররা ঢুকে রয়েছে। তাঁর ছেলে অসীমের মাথা ও কাঁধেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। কংস পাড়ুই নামে আর এক বাসিন্দারও পায়ে গুলি লাগে। দুখে বলেন, ‘‘সে দিনের মতো ভয়ঙ্কর লড়াই আর চাই না। শান্তিতে ভোট হোক, এটুকুই চাই।’’

এ বছর এই জেলায় প্রথম আধা সামরিক বাহিনী নামানো হয় দেগঙ্গাতেই। রুট মার্চ হয় বিভিন্ন উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পর থেকে আর তাদের দেখা নেই বলে জানান এলাকার কয়েক জন। ভোটারদের অভয় দিতে কোনও প্রশাসনিক কর্তা বা নেতাকেও আসতে দেখা যায়নি। দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মল্লিক অবশ্য অভয় দিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, এলাকার ১০টি বুথ স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE