আজ, সোমবার শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক ছাত্রছাত্রীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয় জলপথে। শনিবার দ্বীপ এলাকার পরীক্ষার্থীরা অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে থাকছে, যাতে সময় মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারে।
সুন্দরবনে এমন একাধিক এলাকা রয়েছে, যেখান থেকে নির্ধারিত সময়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে হলে ভোর ভোর বেরোতে হবে বাড়ি থেকে। এক বা একাধিক নদী পেরোতে হবে। ফলে সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছনো নিয়ে বাড়তি মানসিক চাপ থাকে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের। সব থেকে বেশি চিন্তায় থাকে পাথরপ্রতিমা এলাকার পরীক্ষার্থীরা। কারণ, এই এলাকার বেশ কিছু দ্বীপের ছাত্রছাত্রীদের অন্য দ্বীপের স্কুলে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়।
পাথরপ্রতিমার এল-প্লটের শ্রীধরনগর শৈলেন্দ্র বিদ্যাপীঠ এবং উপেন্দ্র হাই স্কুলের পড়ুয়াদের বনশ্যামনগর হাই স্কুলে সিট পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের ভোর ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে। নদী পেরিয়ে স্কুলে ঢুকতে লেগে যাবে ঘণ্টাখানেক। কে-প্লটের বিএমএস গার্লস হাই স্কুল এবং ঋষি রায় বয়েজ় হাই স্কুলের সিট পড়েছে কেদারপুর রামনন্দ হাই স্কুলে। দু’টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হবে। ফলে অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে থাকছে। কারণ, কে-প্লট থেকে কেদারপুর স্কুলে যেতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। টোটো বা গাড়িতে করে খেয়াঘাটে পৌঁছতে হয়, খেয়া পেরিয়ে আবার রিকশা-ভ্যান ধরে স্কুলে পৌঁছতে হয়।
পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীরকুমার জানা বলেন, ‘‘অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে থাকছে। এ ছাড়া, কেদারপুর, বনশ্যামনগর ও ব্রজবল্লভপুর দ্বীপ এলাকা থেকে কেউ পরীক্ষার দিন কেন্দ্রে আসতে চাইলে তাদের জন্য আলাদা করে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকো ও টোটোর ব্যবস্থা থাকছে। আশা করি, কোনও সমস্যা হবে না।
মৌসুনি দ্বীপের বলিয়াড়া কিশোর হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে থাকছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে থাকছে। ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠ স্কুলের সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগের দিন, রবিবার কাকদ্বীপ এলাকায় এসেছে। পরীক্ষা কেন্দ্র কাকদ্বীপ কুমোর নারায়ণ হাই স্কুলে পড়েছে।
সুন্দরবনের গোসাবা ব্লক ন’টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। একই দ্বীপের মধ্যে অন্য স্কুলেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে খুশি এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকেরা। বালি দ্বীপের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শতরূপা মণ্ডল বলে, ‘‘একই দ্বীপের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। অন্য দ্বীপে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে এক দিন আগে গিয়ে কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকতে হত।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘গত বার পরীক্ষার সময় এগিয়ে আসায় কুয়াশা নিয়ে সমস্যা ছিল। এ বার সেই সমস্যা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত লঞ্চ, ট্রলার ও টোটো থাকবে, যাতে পরীক্ষার্থীরা সময় মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, পরীক্ষার কদিন রাস্তাঘাট যানজট মুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)