E-Paper

ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন আমরাই করেছি, ফের দাবি মমতার

মঙ্গলবার বেলা ৩টে নাগাদ বনগাঁ শহরে চাকদহ সড়কে জনসভা করে সড়কপথে তিনি পৌঁছন গাইঘাটার চাঁদপাড়ায়।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১৬
চাঁদপাড়া ঠাকুরনগর রোডে পদযাত্রা মুখ্যমন্ত্রীর।

চাঁদপাড়া ঠাকুরনগর রোডে পদযাত্রা মুখ্যমন্ত্রীর। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

মতুয়াদের বড়মা, প্রয়াত বীণাপানি ঠাকুরের চিকিৎসা এবং মতুয়া ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন যে তাঁরাই করছেন, তা ফের এক বার দাবি করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে বনগাঁ শহরে চাকদহ সড়কে জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘বড়মা যখন অসুস্থ ছিলেন (৬ বার) আমরাই ওঁকে বেলভিউতে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) খবর দিত। বড়মার মৃত্যুর আগের দিনও আমি দেখতে গিয়েছিলাম ওঁকে। ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন আমরাই করেছি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করেছি।’’

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন যদি কেউ করে থাকে, তা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ঠাকুরবাড়িতে এলেই উন্নয়ন চোখে পড়বে। মতুয়া ধর্ম মহামেলার সময়ে সারা দেশ থেকে ভক্তদের আসার জন্য কেন্দ্র বিনা খরচে ট্রেনের ব্যবস্থা করে। ঠাকুরবাড়িতে তো ওঁর আসারই মুখ নেই। কারণ, হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে তিনি কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছিলেন। ওঁকে যাঁরা ঠাকুরবাড়িতে আনতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও পারেননি। ফালতু কথা বলে বাজার গরম করে লাভ নেই।’’

মঙ্গলবার বেলা ৩টে নাগাদ বনগাঁ শহরে চাকদহ সড়কে জনসভা করে সড়কপথে তিনি পৌঁছন গাইঘাটার চাঁদপাড়ায়। সেখান থেকে ঠাকুরনগর অভিমুখে দু’কিলোমিটার ঢাকুরিয়া পর্যন্ত হাঁটেন। সঙ্গে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। রাস্তার দু’পাশে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বহু মানুষ ভিড় করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাঁটো। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চলেছে। পদযাত্রা শুরুর আগে মমতা ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রীর গলায় নতুন গামছা পরিয়ে দেন। তিনি সেটি পরেই হাঁটেন। মতুয়া ভক্তেরাও ডাঙ্কা-কাঁসি নিয়ে মিছিলে হেঁটেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী পদযাত্রা করার সময়ে এক মহিলা বেষ্টনী ভেঙে এগিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন। রাস্তার দু’পাশের মানুষ হাত নেড়ে, নমস্কার জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মুখ্যমন্ত্রীও সকলের উদ্দেশ্যে কখনও হাত নাড়ান, কখনও নমস্কার করেন। পদযাত্রা চলার সময়ে রাস্তার পাশে এক মহিলা কোলে সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ‘দিদি দিদি’ বলে চিৎকার করতেই মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়ে শিশুটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পিছনে হাজার হাজার মানুষ হাঁটেন। ঢাকুরিয়া থেকে তিনি সড়ক পথে ফিরে যান কলকাতায়।

মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘মতুয়াদের আশা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুরবাড়ি আসবেন। কিন্তু নানা কারণে আসতে পারেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, মতুয়াদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কাটা গেলে তিনি লড়াই করবেন। এর ফলে মতুয়ারা ভরসা পেয়েছেন।’’

ঠাকুরবাড়িতে দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে ধিক্কার জানিয়ে পোস্টার পড়েছিল। মমতা ঠাকুর সোমবার রাতে ওই বিষয়ে গাইঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নাম না করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সমালোচনা করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বিদেশে চলে গিয়েছেন। (সম্প্রতি শান্তনু ইংল্যান্ডে যান) এর পিছনে বড় রহস্য আছে। কেউ চুরি করলেও বিদেশে যাচ্ছেন আর আমাদের লোকগুলোকে বিনা দোষে জেলে ভরছে। বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সেভ (রক্ষা) করতে। কিন্তু আমরা রেকর্ড পেয়ে গিয়েছি। কেউ অন্যায় করলে আমাদের বিচারের দাবি তোলার অধিকার আছে।’’ শান্তনু এর জবাবে পরে বলেন, ‘‘আমি এক জন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। আমি যখন বিদেশে যাই, সেটা কি সরকারি সফর নয়? ভাইপো তো আমেরিকায় চোখ দেখাতে যান। এত বিলাসিতা! ওঁর মুখে এই ফাজলামি মানায় না।’’

এ দিন বেলা ১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে বনগাঁ শহরে আসার কথা ছিল। হেলিপ্যাডও তৈরি হয়েছিল। যদিও হেলিকপ্টার-বিভ্রাটে তিনি সড়কপথে আসেন। বনগাঁয় আসার পথেও বহু মানুষ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁকে দেখতে। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বক্তৃতা করার সময়ে মঞ্চের একাংশের কাপড়ের জন্য মানুষের দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা কর্মীদের কাপড় খুলে দিতে নির্দেশ দেন। কাপড় খুলে দেওয়া হলে জনতা চিৎকার করে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দেয়।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘জনসভা ও পদযাত্রা মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিউৎসাহ দেবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Gaighata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy